পুরনো ছবিকে অসত্যভাবে মরক্কোর ভূমিকম্পের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রচার

কয়েকটি ছবিকে কোলাজ আকারে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে এগুলোকে গত সেপ্টেম্বরে মরক্কোতে আঘাত হানা ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতির বলে বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, কোলাজের চারটি ছবির মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সবগুলোই ভিন্ন দেশের ভিন্ন ঘটনার ছবি।

ফেসবুকে গত ১০ সেপ্টেম্বর এখানে আপলোড করা একটি পোস্টের বাংলা ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "মরক্কোর মাঘরেব শহরে ৬.৮ থেকে ৭.০ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে যা এই যাবতকালে মরক্কোর সবচেয়ে ভয়াবহ ভুমিকম্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।"

পোস্টটিতে আংশিকভাবে ধ্বসে পড়া চারটি ভবনের ছবি দেখা যায়।

Image

কিছু পোস্টে সমুদ্র উপকূলে আটকে পড়া অন্য একটি জাহাজের ছবিও শেয়ার করতে দেখা গেছে।

Image

গত ৮ সেপ্টেম্বর মরক্কোতে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর থেকে ছবিগুলো সামনে আসে। ওই ভূমিকম্পে ৩০০০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ নিহত হয় এবং আরো ৫,৬০০ হাজার আহত হন

ওই দূর্যোগে হাই এটলাস পর্বতমালা এবং এর আশেপাশের ৩,০০০ গ্রামের প্রায় ৬০,০০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একই ধরনের দাবি সহকারে ছবিগুলো ফেসবুকে এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

তবে এসব ছবির একটি মরক্কোর সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্পের পর তোলা হলেও ৩টি ছবি তুরস্ক এবং ইতালিতে অতীতের দুটি ভূমিকম্পে এবং অন্য একটি ছবি জাপানে সুনামির পরে তোলা হয়েছিল৷

পুরনো দূর্যোগের ছবি

কোলাজের প্রথম ছবিটি মরক্কো ভূমিকম্পের সাত মাস আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বার্তা সংস্থা রয়র্টাস প্রকাশ করে (আর্কাইভ লিংক)।

ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, "গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর তুরস্কের দিয়ারবাকিরে ধ্বংসস্তূপের নীচে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান করছে উদ্ধারকর্মীরা।"

তুরস্ক এবং তার প্রতিবেশি দেশ সিরিয়ায় আঘাত হানা বিধ্বংসী ওই ভূমিকম্পে দুই দেশে ৫০,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে এএফপির এক প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়।

নিচে বিভ্রান্তিকর পোস্ট (বামে) এবং রয়টার্সের ছবির (ডানদিকে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

Image

বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়ানো পোস্টের দ্বিতীয় ছবিটিও ফেব্রুয়ারিতে তুরস্কের ভূমিকম্পের পর তোলা।

ছবিটি বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি) নিচের শিরোনামে প্রকাশ করে: "গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তুরস্কের আদানায় একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে লোকজনের খোঁজ করছে ইমার্জেন্সি টিম। শক্তিশালী ভূমিকম্পে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক ও সিরিয়ার একাধিক ভবন ধ্বসে পড়েছে এবং বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে (আর্কাইভ লিংক)।"

Image

বিভ্রান্তিকর পোস্টের চতুর্থ ছবিটি ইমেজ এগ্রিগেটর ওয়েবসাইট পিক্সাবে-তে পাওয়া যায়, যেখানে কোন ক্যাপশন ছাড়াই প্রকাশিত ছবিটার জন্য অ্যাঞ্জেলো জিওরডানো নামে একজন ফটোগ্রাফারকে ক্রেডিট দেয়া হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

২০০৯ সালে ইতালির ওন্না অঞ্চলে ভূমিকম্পে ৩০০ জনেরও বেশি লোক মারা যাওয়ার পরে গেটি ইমেজেস প্রকাশিত এই ছবিটিতেও একই দৃশ্য দেখানো হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

গেটি ইমেজেসের ছবির ক্যাপশনে বলা হয়: 'ল'আকুইলা, ইতালি - জুন ০২: ৬ এপ্রিল ইতালির আব্রুজো অঞ্চলে শক্তিশালী ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ওন্নার এই রাস্তায় সেখানকার গ্রামের ৪১ জন বাসিন্দা নিহত হয়েছিল এবং ২ জুন ২০০৯ ওই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০।"

নিচে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ছড়ানো ছবি (বামে) এবং গেটি ইমেজেসের ছবির (ডানদিকে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

Image

অন্য যে ছবিটিতে তীরে ভেসে আসা জাহাজের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, সেটি ২০১১ সালে জাপানে সুনামির পর তোলা।

এপি'র প্রকাশিত ছবির ক্যাপশনে বলা হয়: "শুক্রবার জাপানের পূর্ব উপকূলে সবচেয়ে বড় রেকর্ডকৃত ভূমিকম্প আঘাত হানার পর, মার্চ ১২, ২০১১ শনিবার সকালে, মিয়াগি প্রিফেকচারের কেসেননুমার একটি বন্দরের ভেসে আসা জাহাজ মাটিতে আটকে আছে।" (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ছড়ানো ছবি (বামে) এবং এপি'র ছবির (ডানদিকে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

Image

মরক্কোর ভূমিকম্প নিয়ে এএফপি ফ্যাক্ট চেক এর আগে বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন দাবি খণ্ডন করেছে এখানে এবং এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ