পাকিস্তানে বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের পুরনো ক্লিপকে সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

পাকিস্তানের ব্যস্ততম লাহোর বিমানবন্দরে ২০২৪ সালের মে মাসের একটি অগ্নিকাণ্ডের ফুটেজকে সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক ব্যবস্থা বিস্ফোরণের দৃশ্য বলে অসত্যভাবে অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের দাবিগুলো অসত্য।

২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখের একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, “পাকিস্তানের লাহোরের আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি স্থাপনের সময় বিস্ফোরণের পর আগুন জ্বলছে।

এতে আরও বলা হয়,  “এ ঘটনায় ‘১৪ জন পাকিস্তানি সেনা’ নিহত হয়েছেন। লাহোর বিমানবন্দরে সমস্ত পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে”।  

পোস্টে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে লোকজনকে ধোঁয়ায় ভরা একটি ভবনের দিকে তাকাতে দেখা যায়। 

Image
৩ জুন, ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টটির স্ক্রিনশট

২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর একটি হামলায় বন্দুকধারীরা ২৬জনকে হত্যা করার কয়েক দিন পর দাবিটি অনলাইনে ছড়ানো হয়। হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দোষারোপ করে নয়াদিল্লি। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে পাকিস্তান(আর্কাইভ লিংক)।

মে মাসে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই শত্রুর মধ্যে চার দিনের উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আগে যুদ্ধে উভয় পক্ষের ৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়(আর্কাইভ লিংক)।

অসত্য পোস্টটি ফেসবুকে অন্যত্র এখানেএখানে ছড়ানো হয়েছে। এসব পোস্টের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় কিছু ব্যবহারকারী দাবিটিকে সত্য বলে বিশ্বাস করছেন।

"এতো এখন শুধু বিমান বন্দরে লেগেছে , এবার পুরো পাকিস্তানে লাগবে," একজন মন্তব্য করেন। 

অন্য একজন লিখেন, “খুব ভাল, এখন পুরো পাকিস্তানে ছড়িয়ে দেয়ার পালা,”।  

ভিডিওটির কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, ভিডিওটি ৯ মে ২০২৪ তারিখে ইউটিউবে  আপলোড করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা আছে, “লাহোর বিমানবন্দরে ভয়াবহ আগুন। তদন্ত বলছে একটি শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত”।

Image
অসত্য পোস্ট (বামে) এবং ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট

আরও অনুসন্ধানে অসত্য ক্লিপের একটি সাইনবোর্ডের পাশে ধোঁয়ার স্তম্ভটি একই দিন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নিয়ে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম আজ টিভির প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনের ১৪ সেকেন্ডের দৃশ্যে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

Image
ধোঁয়ার স্তম্ভটি চিহ্নিত করে অসত্য ভিডিও (বামে) এবং আজ টিভির প্রতিবেদনের মধ্যে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট

অগ্নিকাণ্ডটি নিয়ে ওই সময় অন্যান্য পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমেও  প্রতিবেদন করেছে। একটি শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে (আর্কাইভ এখানে  ও এখানে)।

 ২৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অফ পাকিস্তানের (এপিপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অগ্নিকাণ্ডের কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে দেশটির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সাথে তাঁরা দাবিটিকে “ভিত্তিহীন, অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর” বলে খারিজ করে দেন (আর্কাইভ লিংক)। 

কাশ্মীর হামলার পর ছড়ানো অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করে এএফপি প্রতিবেদন করেছে এখানে ও এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ