পুরনো সংবাদ সম্মেলনের ক্লিপ, পাকিস্তানকে নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'ভয়' প্রকাশের নয়

নিজেদের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে ভয়ঙ্কর হামলার পর ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টির মধ্যে এই গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো ফুটেজটি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অক্ষমতা স্বীকারের নয়। যা সামাজিক মাধ্যমের অসত্য দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। ফুটেজটি পুলিশের হাতে একজন কর্নেলের লাঞ্ছনার অভিযোগ নিয়ে পুরনো সংবাদ সম্মেলনের।  

২৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, "ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেলরা সভা থেকে বেরিয়ে গেলেন। তারা বললেন, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম নই!" 

ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি ইঙ্গিত করে এতে আরও বলা হয়, "কিন্তু মোদি এখনও যুদ্ধ চায়! অথচ তার সেনাবাহিনী যুদ্ধ করতে সক্ষম নয়।"  

পোস্টের সাথে যুক্ত ১৯ সেকেন্ডের একটি ক্লিপে উর্দি পরিহিত কিছু ব্যক্তিকে একটি সভাকক্ষ ত্যাগ করতে দেখা যায়। এসময় কোন একজনকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায় যে, "আপনি কেবলমাত্র এসে বিবৃতি পড়ে চলে যেতে পারেন না। আপনি কিসের ভয় পাচ্ছেন? সেনাবাহিনী কিসের ভয় পাচ্ছে?" 

ক্লিপটি ৫৫ হাজার বারের বেশি দেখা হয়েছে এবং একই ধরনের পোস্টে ক্লিপটি ফেসবুকে অন্যত্র ছড়ানো হয়েছে।   

Image
৫ মে ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট 

নিজেদের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশীর মাঝে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টির মধ্যে এ ঘটনা ঘটে(আর্কাইভ লিংক)।   

সহিংসতায় অন্তত ৪৩ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সীমান্তে ভারতের হামলা এবং গুলিবর্ষণে ৩১ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। অন্যদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি (আর্কাইভ লিংক)।  

ভারত-শাসিত বিতর্কিত কাশ্মীরে ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে পর্যটকদের ওপর গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হামলায় ২৬ ব্যক্তি নিহত হন। প্রাণঘাতী ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।    

তবে ছড়ানো ক্লিপটি সাম্প্রতিক সংকটের সাথে সম্পর্কিত নয়। 

ভিডিওটির কিফ্রেম নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের প্রতিবেদক মান আমান সিং ছিনা ভিডিওটি ২৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে এক্স-এ ক্লিপটি পোস্ট করেছেন(আর্কাইভ এখানেএখানে)।    

পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "কোন ধরনের প্রশ্ন না নিয়ে পাতিয়ালায় কর্নেল সম্পর্কে একটি বিবৃতি পড়ার পর চিফ অফ স্টাফ ওয়েস্টার্ন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহিত ওয়াধওয়া তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্রুত চলে গেলেন।"   

"ডিজিপিও একটি বিবৃতি পড়ে চলে গেলেন। কিন্তু আজকাল অন্তত তিনি মিডিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। সেনাবাহিনী কিসের ভয় পাচ্ছে?"   

Image
অসত্য পোস্টের (বামে) এবং এক্স-এর ফুটেজের তুলনামূলক স্ক্রিনশট 

একাধিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবাদ সম্মেলনটি ছিল সৈনিক পুষ্পিন্দর সিং বাথের মামলা সম্পর্কিত। তিনি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পুলিশকে তাঁর এবং তাঁর ছেলের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন(আর্কাইভ এখানেএখানে)। 

দি নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহিত ওয়াধওয়া এবং পাঞ্জাব পুলিশ প্রধান গৌরব যাদব স্থানীয় সাংবাদিকদের বিবৃতি পাঠ করে জানান যে তারা ঘটনাটি তদন্ত করবেন (আর্কাইভ লিংক)। 

ইউটিউবে পাঞ্জাব সরকারের পোস্ট করা ভিন্ন কোন থেকে নেয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, বিবৃতি পড়ার পর কর্মকর্তারা কোন প্রশ্ন গ্রহণ করেন নি (আর্কাইভ লিংক)।  

কাশ্মীরে হামলার পর এএফপি অন্যান্য অপতথ্য খণ্ডন করে প্রতিবেদন করেছে এখানে এখানে।  

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ