জাপানের অপরাধীদের ব্যবহৃত নকল আঙ্গুলকে ভারতের নির্বাচনের সাথে অসত্যভাবে যুক্ত করে প্রচার

ভারতের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কৃত্রিম আঙ্গুলের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির কোনো অভিযোগ না পেলেও সামাজিক মাধ্যমে কিছু পোস্টে একটি ছবি শেয়ার করে ভিত্তিহীনভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভােট জালিয়াতির জন্য নকল আঙ্গুল তৈরির অভিযোগ তোলা হয়েছে। ভারতের জাতীয় নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ছড়ানো ছবিটি মূলত জাপানের সাবেক একটি অপরাধী চক্রের তৈরি নকল আঙ্গুলের ছবি।

গত ১২ এপ্রিল ২০২৪ টেবিলের উপর ছড়িয়ে থাকা কিছু আঙ্গুলের দুটো ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বলা হয়: "সবাইকে সাবধান করুন, ট্রিমূলীদের নতুন ফন্দি সবাইকে জানিয়ে দিন। প্রয়োজনে প্রশাসনের সাহায্য নিন।"

পোস্টের ছবির উপর জুড়ে দেয়া ক্যাপশনে আরো বলা হয়: "ভোটে কারচুপির জন্য নকল আঙ্গুল। জাল ভোট দেওয়ার জন্য নকল আঙ্গুল তৈরি হচ্ছে। আঙ্গল তো নয় আঙ্গুলের খোলস। আঙ্গুল পরে নিলে বুঝাই যাবে না সেটি আসল না নকল। ভোটগ্রহণ কর্মীরা ওই আঙ্গুলে কালি মাখিয়ে বোকা বনে যেতে পারেন। দেশের কি হাল দেখুন।"

Image

একজনের দ্বারা একাধিক ভোট ঠেকাতে পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের মতো ভোট দেয়ার পর ভারতের নাগরিকরদের তর্জনীতেও একটি কালি লাগিয়ে দেয়া হয়।

নতুন সরকার নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সংসদীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের প্রায় শতকোটি মানুষ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারেন বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। দেশেটির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে তার প্রচারণা বড় একটি ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা তাদের।

তবে মোদির সরকার দেশটির ২০ কোটি মুসলমান জনগোষ্ঠীকে কোনঠাসা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তার সমালোচকরা।

একই পোস্ট অন্যত্র ফেসবুকে এখানে ও এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

পোস্টটি একই দাবিতে হিন্দি ভাষায় এখানেএখানে এবং এক্স (আগে যা টুইটার হিসেবে পরিচিত ছিল) এখানে শেয়ার করা হয়।

২০১৯ সালের নির্বাচনেও ভোট জালিয়াতির জন্য নকল আঙ্গুল ব্যবহার হয়েছে বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়ানো হয়েছিল

ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র অনুজ চন্দক জানিয়েছেন যে, এখন পর্যন্ত এই গুজবের কোন সত্যতা নেই।

গত ৩ মে তিনি এএফপি বলেন, "দাবিটি পুরোপুটি অসত্য। এবং আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোন অভিযোগ আসেনি।  ভোট গ্রহণ পুরোপুরি নিরাপত্তার সাথে সম্পন্নের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিয়োজিত।"

অভিযোগটি খণ্ডন করে নির্বাচন কমিশন এক্স-এ একটি বিবৃতিও পোস্ট করেছে (আর্কাইভ লিংক)।

জাপানি গ্যাংস্টার

রিভার্স ইমেজ সার্চে নকল আঙ্গুলের ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবি জাপানি-আমেরিকান সাংবাদিক আকিকো ফুজিতার ওয়েবসাইটের শেয়ার করা পোস্টে পাওয়া যা (আর্কাইভ লিংক)।

২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়: "কৃত্রিম আঙ্গুলগুলের সাহায্যে পুর্নগঠিত হচ্ছে প্রাক্তন ইয়াকুজা সদস্যরা।"

জাপানে বিশ্বাসঘাতকতা বা যুদ্ধে পরাজয়ের প্রায়শ্চিত্ত স্বরুপ একটি আঙুল কেটে ফেলার রীতিকে ইয়াকুজা বলা হয়।

নিচে ভারতের নির্বাচনের সাথে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে ছড়ানো ছবি (বামে) এবং ফুজিতার ওয়েবসাইটের (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

ফুজিতার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আঙ্গুলগুলি প্রস্থেটিক্স বিশেষজ্ঞ শিনতারো হায়াশি তৈরি করা হয়েছিল।

এএফপির একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় সংঘটিত অপরাধ করে আঙুল হারিয়েছে এবং নাগরিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এমন প্রাক্তন ইয়াকুজা সদস্যদের মধ্যে হায়াশির কাজের অপ্রত্যাশিত গ্রাহক রয়েছে।

এএফপির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, তার সিলিকনের তৈরি আঙ্গুলগুলি এতোটাই সূক্ষ্ম যে, সেগুলোকে বাস্তবে জীবন্ত আঙ্গুলের আকৃতি দিতে তিনি হাত এবং বাহু থেকে নেওয়া পৃথক লোম প্রতিস্থাপন করেন।

অসত্য দাবির পোস্টে শেয়ার করা নকল আঙ্গুলের দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৩ সালের ৬ জুন হায়াশির কাজ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে অসত্য দাবির পোস্টে ছড়ানো ছবির (বামে) এবং এবিসি নিউজের প্রতিবেদনের (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

ভারতের নির্বাচন ঘিরে বহু বিভ্রান্তিকর তথ্য যাচাই করে এএফপির তৈরি প্রতিবেদন দেখুন এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ