বৈদ্যুতিক তারে আটকানো ড্রোনের পুরনো ভিডিওকে অসত্যভাবে ইরানের হামলার সাথে সম্পৃক্ত করে প্রচার 

একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ইরানকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে দেখা গেছে। কথিত ভিডিওটিতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা ইরানের একটি ড্রোন ইরাকে বৈদ্যুতিক তারে আটকে গেছে  বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ভিডিওটি ইসরায়েলের উপর তেহরানের নজিরবিহীন আক্রমণের দুই মাস আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত হতে দেখে গেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ভিডিওটি সিরিয়ায় ধারণ করা।

১৪ এপ্রিল ২০২৪ ফেসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ইরান ইসরায়েলে একটি ড্রোন পাঠিয়েছিল, এটি ইরাকের বৈদ্যুতিক পাওয়ার লাইনে আটকে যায়।"

Image

৩২৭ বারের বেশি ভিউ হওয়া ভিডিও ফুটেজটিতে একটি ড্রোনকে ওভারহেড পাওয়ার লাইনে আটকে থাকতে দেখা যায়। এসময় ক্যামেরার পেছনে একজনকে আরবি ভাষায় বলতে শুনা গেছে 'এটা এখানে তারে আটকে আছে'।

একই দাবিতে ভিডিওটি অন্যত্র ফেসবুকে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়।

একই ধরনের পোস্টে ভিডিওটি ফেসবুকে এবং এক্স (সাবেক টুইটার) -এ ইংরেজি, চাইনিজ, থাই এবং বার্মিজ ভাষায় শেয়ার করা হয়।

গত ১৩ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ইসরাইলে ইরানের নজিরবিহীন ড্রোন ও মিসাইল হামলার পর পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে থাকে।

১ এপ্রিল একটি বিমান হামলায় দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। হামলায় ইরানের রেভুলেশনারি গার্ডসের সাতজন সদস্য নিহত হন। ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে প্রতিশোধ হিসেবে তেহরান ৩০০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপনাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্র দেশের সহযোগিতায় নিষ্ক্রীয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এর বাইরে যে কয়টি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়েছে, তাতে সামান্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হামলার পর ইরানী মিসাইলের কিছু খণ্ডিতাংশ প্রতিবেশী ইরাকে পাওয়া গেছে (আর্কাইভ এখানে)।

পুরনো ফুটেজ

রিভার্স ইমেজ সার্চে ইরানের হামলার দুই মাস আগে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বৈদ্যুতিক লাইনে ড্রোন আটকে থাকা ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট পাওয়া যায়।

২১ ফেব্রুয়ারি ছবিটি ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করে আল জাজিরা সিরিয়া জানায় যে, এটি সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব হাসাকেহ প্রদেশে ধারণ করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটি হাসাকেহ প্রদেশে ধারণ করা হয়েছে বলে একই দিন সিরিয়ার স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম ভিডিওটি এখানে এখানে পোস্ট করেছে (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

এএফপি নিজেদের কোন সূত্রে ফুটেজটি ধারণের জায়গা সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারেনি।

তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশের সৈন্যদের পর দফায় দফায় ড্রোন এবং রকেট হামলা করেছে ইরানপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ।

এসব হামলার বেশির ভাগের দায় নিয়েছে ইরান-সমর্থিত গ্রুপগুলির মধ্যে তুলনামূলক দুর্বল জোট ইসলামিক রেজিস্টেন্স ইন ইরাক। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সমর্থনে ইরান সমর্থিত যেসব জোট ক্ষুব্ধ হয়েছে ইসলামিক রেসিসটেন্স ইন ইরাক তাদের একটি।

এএফপি বহু ছবি এবং ভিডিও যাচাই করেছে, যেগুলোকে অসত্যভাবে ইসরায়েলে ইরানের হামলার ছবি বলে ছড়ানো হয়েছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ