এটি পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রহরী কর্তৃক প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের টেনে হিঁচড়ে নেয়ার দৃশ্য

পুলিশ এবং নিরাপত্তা প্রহরীরা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে টেনে হিঁচড়ে নেওয়ার একটি ভিডিও শেয়ার করে সেটিকে  মুসলিম নারীদের উপর উগ্রবাদী হিন্দুদের হামলার ভিডিও বলে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে বিভ্রান্তিকর দাবিটি এমন সময় ছড়ানো হচ্ছে যখন প্রতিবেশী ভারতে ছয় সপ্তাহব্যাপী জাতীয় নির্বাচন চলছে। আর এ নির্বাচনে হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয় বারের মতো জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ভিডিওতে দেখা যায়, নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কাছে থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  ভারতের মুসলমানদের জন্য নাগরিকত্ব আইন বৈষম্যমূলক বলে মনে করছেন সমালোচকরা।

গত ৪ এপ্রিল ২০২৪ ফেসবুকে শেয়ার করার একটি ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ভারতে হিজাব পরিধান করা মুসলিম নারীদের মারধর করে গোমূত্র খাওয়া উগ্র হিন্দু নারীরা।"

Image

ভিডিওটিতে ভারতীয় পুলিশ এবং হাল্কা নীল পোশাক পরিহিত লোকজনকে হিজাব পড়া এক দল নারীকে মারধর এবং টেনে হিঁচড়ে নিতে দেখা যায়।

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তৃতীয় দফার বিজয়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পেশীবহুল 'হিন্দুই সবার আগে' রাজনীতি মোদির নির্বাচনী প্রচারণার মূল আর্কষণ। তবে তার বিরুদ্ধে দেশটির ২০ কোটি মুসলমানকে কোনঠাসা করার অভিযোগ তুলেছেন মোদির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

দেশটিতে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং এর বৃহত্তম সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দীর্ঘ এবং ভয়াবহ ইতিহাস রয়েছে। এই বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগাতে ক্রমবর্ধমান আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।

একই ভিডিও অনুরূপ দাবিতে অন্যত্র ফেসবুক পোস্টে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে, যা কয়েক হাজার ভিডিও হয়েছে।

পোস্টের কমেন্ট বিশ্লেষণ করা দেখা যায় যে, ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ভিডিওটিতে বিভ্রান্ত হয়েছেন।

একজন ব্যবহারকারী তার মন্তব্যে লিখেন, "লজ্জা ভারত, লজ্জা"।

অন্য একজন লিখেন, "তারা ওখানে মুসলমানদের নির্যাতন করছে আর আমরা এখানে শান্তিতে বাস করছি।"

পোস্টটিতে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হলেও ভিডিওটি উগ্রবাদী হিন্দুদের হামলার নয়।

নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষােভ

গুগলে রিভার্স ইমেজ এবং কিওয়ার্ড সার্চে গত ১৩ মার্চ ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা একটি পোস্টে একই ভিডিও পাওয়া গেছে (আর্কাইভ লিংক)।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত নিউজ পোস্ট করা ডিইউ আপডেটসের ওই পোস্টে আরো দুটি ভিডিও শেয়ার করা হয়।

নিচে বিভ্রান্তিকর পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একই ভিডিওর (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

ইনস্টাগ্রাম পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "সিএএ-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছে। তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটিও জানা যায়নি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল এই বিক্ষোভ আয়োজনের পর ৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে পুলিশ তুলে নেয়।"

গত ১২ মার্চ বাস্তবায়িত সিএএ হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন

বিতর্কিত এই আইন প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘু অভিবাসীদের ভারতের নাগরিকত্ব সহজ করেছে। তবে মুসলিম অভিবাসীদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।

ইনস্টাগ্রাম পোস্টে শেয়ার করা ভিডিওগুলোর মধ্যে একটিতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সম্মুখভাগ দেখা যায়, যা গুগল ম্যাপে শেয়ার করা লাইব্রেরির ছবির সাথে যার মিল রয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা একই ভিডিও (বামে) এবং গুগল ম্যাপে শেয়ার করা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয় গত ১৩ মার্চ সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভের সময় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন ছাত্রকে আটক করা হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

প্রতিবেদনে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এমকে মিনাকে উদ্ধৃতি করা হয়, যেখানে তিনি বলেন যে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো।

এতে বিক্ষোভকারীদের ধর্ম কিংবা 'হিন্দু উগ্রবাদীরা' সেখানে উপস্থিত ছিল বলে কোন উল্লেখ নেই।

হাল্কা-নীল পোশাক পরিহিত যেসব লোককে বিভ্রান্তিকর পোস্টে 'হিন্দু উগ্রবাদী" দাবি করা হয়, তাদের তথ্য জানতে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চে গেটি ইমেজেস এবং ভারতীয় সংবাদপত্র দি টেলিগ্রাফে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীদের অনুরূপ পোশাক পরিহিত ছবি পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ