ট্রাক্টর স্টান্টের পুরানো ভিডিওকে অসত্যভাবে ভারতের কৃষক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রচার

ট্রাক্টরসহ সম্প্রতি আন্দোলনরত শহরমুখী কৃষকদেরকে আটকানোর জন্য ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সব প্রবেশপথে ধাতব স্পাইক এবং স্টিলের ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করেছে দেশটির দাঙ্গা পুলিশ। তবে একটি ট্র্যাক্টরের নদী পার হওয়ার ভিডিওকে কৃষকরা অবরোধ ভেঙ্গে বিকল্প পথে শহরে প্রবেশ করছেন-- সামাজিক মাধ্যমে এমন অসত্য দাবি করা হলেও, ভিডিওটি সম্প্রতিক আন্দোলনের নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটি ফসলের দাম নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিতর্ক ঘিরে সর্বশেষ শুরু হওয়া বিক্ষোভের কয়েক বছর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল। যে ব্যক্তি ক্লিপটি শেয়ার করেছিলেন, তিনি জানিয়েছেন যে, ভিডিওটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের, কোনো বিক্ষোভের নয়।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে এখানে আপলোড করা ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, "কৃষক আন্দোলনের কৃষকদেরকে আটকাতে রাস্তাতে পেরেক পুতে রেখেছে মোদী সরকারের পুলিশ। বড়ো বড়ো ব্যারিকেড সাজানো হয়েছে, তাই কৃষকরা রাস্তা পাল্টে নদীর উপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে রাজধানী পৌঁছাচ্ছে।"

"এদেশ কৃষকদের, মোদী বা RSS এর নয়! কৃষক আন্দোলন জিন্দাবাদ।"

Image

দুই হাজার বারের বেশি ভিউ হওয়া ভিডিওটিতে একটি ট্র্যাক্টর-ট্রলিকে নদী পার হতে দেখা যায়।

ভিডিওটি এমন সময় সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে যখন নয়াদিল্লির দিকে অগ্রসরমান বিক্ষোভকারী কৃষকদেরকে রাজধানী থেকে অর্ধেক পথ দূরে কংক্রিটের দুর্গের মতো প্রাচীর দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। মহাসড়কে ধাতব স্পাইক, ব্লক এবং ইস্পাত ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ নগরীকে তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। এছাড়া জলকামান এবং ড্রোনের সাহায্যে উপর থেকে থেকে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ।

নিজেদের ক্ষোভ ও দুঃখ রাজনীতিবিদদের সামনে তুলে ধরে প্রতিশ্রুত ফসলের দামের দাবিতে অনেক কৃষক ট্রাক্টর চালিয়ে ভারতের উত্তরাঞ্চলের পাঞ্জাব রাজ্যে জড়ো হয়েছেন। এসময় বিক্ষোভকারী কৃষকদের পতাকা উড়িয়ে হর্ন বাজিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

কৃষকরা জানিয়েছে, রাজনৈতিক নেতারা যেহেতু তাদের দাবি শুনছেন না, তাই তারা ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ স্মরণে 'দিল্লি চলো' কর্মসূচি শুরু করেছে। তিন বছর আগের ওই বিক্ষােভে তাঁরা বাঁধা ভেঙ্গে নয়াদিল্লিতে প্রবেশ করেছিল।

কৃষকদের আন্দোলনের সাথে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়।

বাংলার পাশাপাশি, ভিডিওটি হিন্দি ভাষায় ফেসবুকে এখানে, এখানে এবং এক্স'-এ এখানে শেয়ার করা হয়।

ধর্মীয় শোভাযাত্রা

হিন্দি ভাষায় ক্যাপশন দিয়ে ছড়ানো ভিডিও পোস্টটির কিছু মন্তব্যে বলা হয় যে, এটি পাঞ্জাব রাজ্যের শিখ অধ্যুসিত আনন্দপুর সাহিব শহরে ধারণ করা পুরনো ফুটেজ।

পাঞ্জাবি ভাষার একটি কমেন্টে বলা হয়: "জি, এটি পুরনো ভিডিও। এটি শ্রী আনন্দপুর সাহেব জি।"

Image

'আনন্দপুর সাহিব' এবং 'ট্রাক্ট' শব্দগুলো দিয়ে গুগলে ভিডিওটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল ইউটিউবে তালজিন্দর সিং চিমা নামে একজন ব্যবহারকারীর আপলোড করা ভিডিওটি পাওয়া যায় (আর্কাইভ এখানে)।

ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়: "আনন্দপুর সাহিব ভাকরা ড্যাম ফার্মট্র্যাক ৬০ ইপি বিগ ট্রলি।"

ভাকরা বাঁধটি ১৯৬৩ সালে সাতলুজ নদীর উপর নির্মিত হয়েছিল। পাঞ্জাব এবং হিমাচল প্রদেশের কৃষি অঞ্চলে অনেক ছোট ছোট খালের উৎপত্তি হয়েছে এই বাঁধটি থেকে। অন্যদিক, ফার্মট্র্যাক ৬০ ইপিআই হচ্ছে ট্রাক্টরের একটি ধরণ।

চিমার ইউটিউব চ্যানেলে একই ট্রাক্টর-ট্রলির বেশ কয়েকটি ভিডিও পাওয়া যায়, যার মধ্যে এটি এবং এটি রয়েছে।

নিচে অসত্য দাবিতে শেয়ার করা পোস্টের ক্লিপ (বামে) এবং চিমার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

যোগাযোগ করা হলে চিমা এএফপির কাছে নিজেকে পাঞ্জাবের একজন কৃষক হিসেবে পরিচয় দেন। ভিডিওটিতে দৃশ্যমান ট্রাক্টর-ট্রলি চালক ব্যক্তিটি তিনি বলে জানান চিমা।

তিনি বলেন, "ভিডিওটি ২০২২ সালে আনন্দপুর সাহিব শহরে হোলা মহল্লা উৎসব উদযাপনের।"

"যদিও আমি কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থক। কিন্তু এই ভিডিওটির সাথে সম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই," জানান তিনি।

হোলা মহল্লা হল শিখদের একটি বার্ষিক উৎসব যা সাহস এবং প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির বার্তা বহন করে। উৎসবের মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা এবং ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্ট প্রদর্শন (আর্কাইভ এখানে)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ