বাংলাদেশি ক্রিকেটার-রাজনীতিক কর্তৃক 'ক্ষমা চাওয়ার' বানোয়াট ভিডিও ফেসবুকে

বহু লক্ষ ভিউ পাওয়া ফেসবুক পোস্টে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও রাজনীতিক সাকিব আল হাসান তার এক সহকর্মী সংসদ সদস্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন যিনি সাকিবের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং ওই সংসদ সদস্যের বিভিন্ন সময়ের পৃথক পৃথক ক্লিপকে জোড়া দিয়ে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। এছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হামলার অভিযোগের বিষয়ে সাকিব প্রকাশ্যে কোন কথা বলেননি।

গত ১৪ জানুয়ারি ফেসবুক পোস্টে একটি এডিটেড ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: "তিন এমপি একসাথে লাইভে"" ব্যারিস্টার সুমনকে দেখে ভয় পেলো সাকিব।"

তিনটি ক্লিপ জোড়া দিয়ে তৈরি ভিডিওটির বাম দিকে ও মাঝখানে গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচিত সংসদ সদস্য বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজাকে রাজনীতিক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের (ডানে) সাথে একটি ভার্চুয়াল ভিডিও কলে দেখা যাচ্ছে।

এডিটেড ভিডিওটি ৮০ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে।

Image

ভিডিওতে আলোচনার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় দৃশ্যমান মাশরাফিকে বলতে শোনা যায়: "কাপ্তান সাহেব, আসসালামু আলাইকুম। সব সমস্যা তো তুই বাধায় দিস। আজকে মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে।  যাক যাইহোক আমার কাছে মনে হচ্ছিলো যে, মানে ভেতর থেকে মানুষের অনেক কিছু চায়। চাইলে সেটা হয়ে যায়। ওই একটা কারণ ছিলো। আর তুই যে পুংটার পুংটা, ঠিক আছে? ভাই তুই সবার পেছনে খোঁচা মেরে বেড়াস।"

এরপর অনির্দিষ্ট কোন ঘটনার জন্য সাকিবকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়।

এসময় সাকিব বলেন, "আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু তারও মনে হয় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ ছিলো। অবশ্যই খুবই সেনসিটিভ। ভুলত্রুটি হবেই, ভুলত্রুটি নিয়েই আমরা আসলে জীবনে চলাচল করি। আর কোন ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এবং আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্যও আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। অবশ্যই আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমা প্রার্থী এবং আমি মনে করি যে আপনারা এটিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেটাও চেষ্টা করবো।"  

তবে ভিডিওর পুরোটা সময় জুড়ে সুমন চুপ থাকেন। ২০২৩ সালের মার্চে জুয়ার ওয়েব সাইটের পক্ষে প্রচারণা চালানোর সমালোচনা করার পর সাকিবের বিরুদ্ধে তার ওপর হামলা করতে তেড়ে আসার অভিযোগ তুলেন সুমন (আর্কাইভ লিংক)।

তবে তার বিরুদ্ধে আনিত এ অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি সাকিব। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলগুলোর বর্জন করা এবং কারচুপি ও ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ ওঠা ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি এখানে এখানে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

সাকিব এবং মাশরাফি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে অজ্ঞাত কারণে ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগের নেতৃত্ব থেকে বহিষ্কৃত সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন।

ভিন্ন ভিন্ন ক্লিপ

ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওটি মূলত তিনটি ভিন্ন দিনে সাকিব, মাশরাফি এবং সুমনের কথা বলার আলাদা আলাদা ক্লিপ।

সাকিবের ক্লিপটি নেয়া হয়েছে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর ইউটিউবে তার আপলোড করা একটি ভিডিও থেকে। যেখানে একটি হিন্দু উৎসবে অংশগ্রহণ নেয়া এবং অন্য একটি ঘটনায় একজন ভক্তের মোবাইল ফোন ভাঙ্গার বিষয়ে সাকিবকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ক্লিপটিতে সাকিব নিজেকে 'গর্বিত মুসলিম' হিসেবে দাবি করেন। একই সঙ্গে কলকাতার ওই হিন্দু ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিয়ে কারো অনুভূতিতে আঘাত করে থাকলে সে বিষয়ে ক্ষমা চান। উল্লেখ্য, কলকাতার হিন্দু উৎসবে অংশ নেয়ার জন্য সাকিব হত্যার হুমকিও পান (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে বিকৃত ভিডিওটির (বামে) এবং ২০২০ সালের সাকিবের ইউটিউব ভিডিওর (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
(Qadaruddin SHISHIR)

মাশরাফির ক্লিপটি নেয়া হয়েছে ২০২০ সালের মে মাসে তাঁর সতীর্থ ক্রিকেটার তামিম ইকবালের সাথে ভার্চুয়াল আলোচনার ভিডিও থেকে।

২০২০ সালের ৫ই মে তামিম ফেসবুকে ভিডিওটি লাইভ সম্প্রচার করেছিলো (আর্কাইভ লিংক)।

ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওটির (বামে) এবং ২০২০ সালে তামিমের (ডানে) ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
(Qadaruddin SHISHIR)

অন্যদিকে সুমনের ক্লিপটি গত ১২ জানুয়ারি জার্মান সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান ডয়চে ভেলেকে (ডিডব্লিউ) দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছেন (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে বিকৃত ভিডিও(বামে) এবং জানুয়ারি ২০২৪-এ ডিডব্লিউ (ডানে) ভিডিওটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
(Qadaruddin SHISHIR)

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ