ভিডিও ক্লিপটি ১৯০১ সালের একটি ফ্রেঞ্চ ফিল্মের, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দরিদ্র শিশুদের খাবার বিতরণের নয়

ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটি বৃটেনের সদ্য প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক দরিদ্র শিশুদের খাবার বিতরণের ভিডিও। দাবিটি অসত্য; এটি ভিয়েনামে দৃশ্যায়িত হওয়া 'লুমিয়ের ব্রাদার্স'র নির্মিত একটি ফিল্মের অংশবিশেষ। ফিল্মটি প্রয়াত রানীর জন্মের বেশ কয়েক বছর আগে ১৯০১ সালে মুক্তি পায়।

৪৭ সেকেন্ড এর ভিডিওটি গত ৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এখানে শেয়ার করা হয়।

ভিডিওটিতে সাদা গাউন ও হ্যাট পরিহিত দুই নারীকে একদল শিশুর দিকে ছোট কিছু বস্তু নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।

পোস্টটির বাংলা ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দরবার থেকে কেউ খালি হাতে ফিরতেন না। তিনি ক্ষুধার্তদের খাবার দিচ্ছেন।”

Image

পোস্টটিতে আরো বলা হয় বৃটেনের সাবেক উপনিবেশ ও বর্তমানে কমনওয়েলথের সদস্য বাংলাদেশ “একজন জালেমের” মৃত্যুতে তিন দিনে শোক ঘোষণা করেছে।

এতে লেখা রয়েছে, “ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া বীরদের সংগ্রাম কে ভুলে যাওয়া কতো বড়ো অকৃতজ্ঞ এবং চাটুকার জাতি আমরা।”

বৃটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত থাকা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত ৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানীর মৃত্যুতে বৃটিশ রাজপরিবারের প্রতি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে তার মুখপাত্র জানান। 

ভিডিওটি একইরকম দাবিসহকারে ইংরেজিতে আফ্রিকায় এখানে এখানে শেয়ার হয়। একইসাথে স্প্যানিশ আরবিতেও ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। 

তবে দাবিটি অসত্য। 

ফ্রেঞ্চ ফিল্ম

ভিডিওটির কী-ফ্রেম দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর ভিডিওটির অংশবিশেষ উইকিমিডিয়া কমন্সে প্রকাশিত হয়। 

বর্ণনা অনুযায়ী এটি লুমিয়ের ব্রাদার্সের একটি চলচ্চিত্র থেকে নেওয়া।

অগুস্ত (১৮৬২-১৯৫৪) ও লুই লুমিয়ের (১৮৬৪-১৯৪৮) দুই ভাই মিলে তারা চলমান আলোকচিত্র গ্রহণের সূচনা করেন। 

ফ্রেঞ্চ ভাষার চলচ্চিত্রটির শিরোনাম ছিল, “লাং মন্দিরের সামনে আনামাইট শিশুদের কয়েন (ধাতব মুদ্রা) সংগ্রহে ব্যস্ত।”

নীচে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিও (বামে) ও উইকিমিডিয়া কমন্সে প্রকাশিত ভিডিওর (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেখানো হলো: 

Image

লুমিয়ের ব্রাদার্সের ছবি নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সের লিও ভিত্তিক চলচ্চিত্র সংস্থা লুমিয়ের ইনস্টিটিউটের একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, এই ফুটেজটি তাদের “লাং মন্দিরের সামনে আনামাইট শিশুদের কয়েন (ধাতব মুদ্রা) সংগ্রহে ব্যস্ত” শীর্ষক ছবি থেকে নেওয়া।

ছবিটি পরিচালনা করেন গ্যাব্রিয়েল ভিয়ের এবং তা ১৮৯৯ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ততকালীন ফ্রেঞ্চ ইন্দোচীন তথা বর্তমান ভিয়েতনামে দৃশ্যায়ন হয়।

এই মুখপাত্র বলেন, “লাং মন্দিরের সামনে দাড়ানো দুই নারী হলেন ততকালীন ইন্দোচীনের গভর্নর জেনারেলের স্ত্রী ও মেয়ে। তাছাড়া রানী এলিজাবেথের জন্ম আরো ২৫ বছর পরে, ফলে তার এই দৃশ্যে থাকার কোন সুযোগই নেই।”

তিনি আরো বলেন, “এই নারী খাবার ছিটিয়ে দিচ্ছেন না। বরং চীন ও ইন্দোচীনে ব্যবহৃত প্রাচীন মুদ্রা ছিটিয়ে দিচ্ছেন।”

লুমিয়র ব্রাদার্সের ছবির ক্যাটালগ রাখা ফ্রেঞ্চ এই ওয়েবসাইটে এই দুই নারীর কয়েন ছিটানোর প্রকৃত একটি দৃশ্যের স্ক্রিনশট রয়েছে।

এএফপি আরবীতেও একই দাবির ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন করেছে। দেখুন এখানে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ