বাংলাদেশে শ্রমিকদের নদী পার হওয়ার ভিডিওকে ভারতের ভোটার তালিকা সংশোধনের সাথে অসত্যভাবে যুক্ত করে প্রচার

যোগ্য ভোটারদের নথিভুক্ত করা এবং অযোগ্য ভোটারদের বাদ দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকা যাচাই অভিযান শুরু করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এ সময় সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে একটি ভিডিও ছড়িয়ে সেটিকে ভোটার তালিকা যাচাই অভিযানে জিজ্ঞাসাবাদ ও আটকের ভয়ে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীরা পালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ফুটেজটি বাংলাদেশে একটি নদীর তীরে ধারণ করা। প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ মানুষ এ ভাবে কর্মস্থলে যাতায়াত করে বলে স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়। 

নৌকায় উঠার জন্য কাঠের একটি জেটিতে ঠাসাঠাসি করে অপেক্ষারত মানুষের ভিডিওটি ৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ ফেসবুকে ছড়ানো হয়। 

পৃথিবীর বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশে তিন মাস ব্যাপী ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযানের (এসআইআর) প্রতি ইঙ্গিত করে ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "পশ্চিমবঙ্গে SIR শুরু হতেই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী মুসলিম আবার বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছে। একবার চোখ খুলে দেখুন কি পরিমান অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মমতা ব্যানার্জির অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গে বাসা বেঁধে বসেছিল।পশ্চিমবঙ্গে SIR একদম কার্বলিক অ্যাসিডের মতো কাজ করছে" (আর্কাইভ লিংক)। 

পশ্চিমবঙ্গসহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও বেশ কয়েকটি রাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনের আগে যোগ্য ভোটারদের নথিভুক্ত করা এবং অযোগ্য ভোটারদের বাদ দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকা যাচাই কার্যক্রম গ্রহণ করেছে ভারত। 

ভোটার যাচাই এবং কঠোর নথিপত্রের শর্ত পূরণে ব্যর্থতার কারণে আটক হতে পারে এমন ভয়ে ভারত থেকে পালানোর সময় শত শত বাংলাদেশী অভিবাসী সীমান্তে আটকা পড়েছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতের স্থানীয় স্থানীয় গণমাধ্যম (আর্কাইভ লিংক এখানে ও এখানে)

Image
এএফপির যোগ করা ক্রস চিহ্নসহ ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানেএখানে ছড়ানো হয়েছে। 

কিন্তু অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি নদীর তীরে ধারণ করা, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে নয়।

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ২০ অক্টোবর তারিখে ফেসবুকে প্রকাশিত একই ধরনের একটি ফুটেজ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

ফুটেজটির ক্যাপশনে বলা হয়, "আজ সকালে মোংলা নদী পারাপারের দৃশ্য। প্রতিদিন এভাবে হাজার হাজার শ্রমিক ভাই বোন কষ্ট করে  নদী পার হয়।"

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিও (বামে) এবং একই ধরনের ফেসবুক ভিডিওর (ডানে) মধ্যকার মিলগুলো এএফপির যোগ করা হাইলাইটসহ তুলনামূলক স্ক্রিনশট

মো কামরুল ইসলাম সুমন নামের ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রায়ই একই জেটির ভিডিও আপলোড দিয়ে থাকেন (আর্কাইভ লিংক)। 

ভিডিওটি মোংলা ফেরি ঘাটে ধারণ করা হয়েছে বলে এএফপিকে জানিয়েছেন তিনি। 

১৩ নভেম্বর তিনি বলেন, "ভিডিওতে যেসব লোকজনকে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা মোংলা ইপিজের শ্রমিক। তাঁরা কাজে যাওয়া এবং কাজ থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ফেরি ঘাট থেকে ছোট নৌকা ব্যবহার করে।"

১১ নভেম্বর স্থানীয় একটি পত্রিকার খবরে একই ধরনের একটি ছবি ছাপানো হয়। প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ লোক কাজে যাওয়ার পথে মংলা নদী পারাপারে এই  জরাজীর্ণ জেটি ব্যবহার করে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় (আর্কাইভ লিংক)। 

মোংলা নদীর গুগল স্ট্রিট ভিউর ছবিতেও জরাজীর্ণ কাঠের জেটি দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ