পুরনো ভিডিওকে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত করে অসত্যভাবে প্রচার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন প্রথম ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজন করছে, তখন একটি নির্বাচনে মারামারি এবং পুলিশের অভিযানের অসত্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে কিছু ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ক্লিপগুলো ছাত্রসংসদ নির্বাচনের আগের।   

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “এই মুহূর্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট বর্জন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে শিবির এবং ছাত্রদল। দু-পক্ষের বহু হতাহত হয়েছে। গৃহযুদ্ধের পথে সোনার বাংলাদেশ।”

৫২ সেকেন্ডের ক্লিপটিতে উপস্থিত লোকজনের ধারণ করা ভিডিওতে একটি হাতাহাতির দৃশ্য দেখা যায়; ফুটেজটি ফেসবুকে একই দাবিতে অন্যত্র ছড়ানো হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে আরেকটি পোস্টে ভিন্ন একটি ভিডিও ছড়িয়ে সেটিকে দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে “মুখোমুখি সংঘর্ষের” পর ক্যাম্পাসে পুলিশ অভিযান বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়।  

একই দাবিতে পোস্টটি ফেসবুকে এবং ইনস্টাগ্রামে ছড়ানো হয়েছে।

Image
লাল ক্রস চিহ্নসহ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে হাসিনার পতনের পর প্রথমবারের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যথাক্রমে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক এখানেএখানে)। 

উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনেই জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির বড় জয় পেয়েছে। 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। তবে এএফপি ভোটের সাথে সম্পর্কিত সংঘর্ষের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি (আর্কাইভ লিংক)। 

অসত্যভাবে প্রচারিত দুইটি ক্লিপই নির্বাচনের আগের। 

কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে অসত্যভাবে ছড়ানো প্রথম  ক্লিপটির দৃশ্যটি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত এনটিভির একটি লাইভ প্রতিবেদনের ২২ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ফুটেজে পাওয়া যায়(আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ মধুর ক্যান্টিন থেকে সরাসরি।” 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্ট(বামে) এবং ইউটিউব ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গঠিত একটি নতুন ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পদ থেকে কয়েকজনকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে সেদিন কিছু শিক্ষার্থী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে (আর্কাইভ লিংক এখানেএখানে)।

অসত্য ভিডিওতে দৃশ্যমান ভবনের বৈশিষ্ট্য ও গুগল ম্যাপস স্ট্রিট ভিউতে মধুর ক্যান্টিনের ছবির সাথে মিল পাওয়া যায়(আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্টের (বামে) এবং গুগল স্ট্রিট ভিউর ছবির মধ্যকার মিলগুলো চিহ্নিত করে তুলনামুলক স্ক্রিনশট

অপর একটি রিভার্স ইমেজ সার্চে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ১৬ জুলাই ২০২৪ তারিখের একটি পোস্টে দ্বিতীয় অসত্য ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ পাওয়া যায়(আর্কাইভ লিংক)।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “গভীর রাতে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিবর্ষণ।”  

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো পোস্ট(বামে) এবং ফেসবুক পোস্টের ভিডিওর তুলনামূলক স্ক্রিনশট

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ১৬ জুলাই ২০২৪ ভোরে হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যরা হামলা চালায়(আর্কাইভ লিংক)। 

স্থানীয় দৈনিক বাংলার সাংবাদিক আবদুর রহমান খান সারজিলসহ শতাধিক শিক্ষার্থী এবং চারজন সাংবাদিক আহত হন। 

২৩ সেপ্টেম্বর তিনি এএফপিকে বলেন, হামলার সময় পুলিশ যখন রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়েছিল, তখন ভিডিওটি ধারণ করা হয়। 

এএফপি এর আগে বাংলাদেশে ছাত্র পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ছড়ানো অপতথ্য খণ্ডন করেছে এখানে এবং এখানে। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ