কাশ্মীরে হামলার শিকার হিসেবে দম্পতিকে অসত্যভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে

২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন নিহত হন। বন্দুকধারীরা বিদ্রোহ-কবলিত অঞ্চলে পর্যটকদের উপর প্রকাশ্যে গুলি চালালে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে ওই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যম এবং সংবাদ প্রতিবেদনে ছড়ানো ক্লিপটি হামলার আগে একজন সেনা সদস্য এবং তাঁর স্ত্রীর শেষ মুহূর্তের নয়। ভিডিওর ওই ব্যক্তি এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি এবং ওই নারী জীবিত আছেন এবং তিনি অসত্য পোস্টগুলোর নিন্দা জানান। 

গত ২৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে শেয়ার করা একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "পহেলগাঁও-এ জঙ্গি হামলার আগে লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালের শেয়ার করা শেষ ভিডিও..."। 

পোস্টে যুক্ত একটি ভিডিওতে তুষারাবৃত পাহাড়কে পেছনে রেখে এর সামনে একজন ব্যক্তি ও একজন নারীকে নাচতে দেখা যায়। 

দীর্ঘ ক্যাপশনের একটি অংশে আরো বলা হয়, "২৬ বছর বয়সের নেভি অফিসার লেফটন্যান্ট বিনয় নাড়ওয়াল চলতি মাসের ১৬ ই এপ্রিল বিয়ে করেছিলো, হানিমুনের জন্য পছন্দ করেছিলো ভারতের ভূস্বর্গ কাশ্মীর। গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের টুরিস্ট স্পট পহেলগাঁও যাকে বলা হয় মিনি সুইজারল্যান্ড সেখানে বসে সকলে তার প্রিয়জন, পরিবার নিয়ে ভেলপুরী খাচ্ছিলেন সেই সময় জঙ্গীরা বেছে বেছে হিন্দু পুরুষ দের ওপর ভয়ঙ্কর ভাবে হত্যালীলা চালায়।" 

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরে বেসামরিক লোকদের উপর গত পঁচিশ বছরের মধ্যে বন্দুকাধারীদের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলায়এবার ২৬ জন নিহত হলেন।এর পরই ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে "আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে" সমর্থন দেয়ার অভিযোগ তুলেছে (আর্কাইভ লিংক)। 

পেহেলগাম হামলায় দুই পাকিস্তানী ও এক ভারতীয়সহ তিন সন্দেহভাজনের নামে ওয়ান্টেড পোস্টার জারি করেছে ভারতীয় পুলিশ। পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজনরা জাতিসংঘ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য।

এই হামলার সাথে পাকিস্তানকে যুক্ত করার প্রচেষ্টাকে "অযৌক্তিক" মন্তব্য করে ইসলামাবাদ এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে। একই সঙ্গে ভারতের যেকোনো পদক্ষেপের জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে যে, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল  ছিলেন। তিনি স্ত্রীসহ পর্যটক হিসেবে পেহেলগামে ভ্রমণ করছিলেন(আর্কাইভ লিংক)। 

Image
২৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ওই দম্পতির শেষ মুহূর্তের ভিডিও হিসেবে দাবি করে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানেএখানে শেয়ার করা হয়েছে। 

ভিডিওটির কিফ্রেম নিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আফলোড করা একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

ইনস্টাগ্রাম পোস্টে, একই দম্পতিকে নিজেদেরকে যেসব পোস্টে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা নারওয়াল এবং তার স্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো অস্বীকার করতে দেখা যায়। 

ইয়াশিকা শর্মা নামের ওই নারী বলেন, "তার এবং তার পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। কিন্তু আমরা জীবিত"। 

এএফপি ২৫ এপ্রিল ওই দম্পতির সাথে যোগাযোগ করে এবং ক্লিপটিতে দৃশ্যমান আশিস শেহরাওয়াতের সাথে কথা বলেছে। 

তিনি বলেন, "আমরা ১৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে কাশ্মীরের পেহেলগামে ভিডিওটি ধারণ করেছি"। 

"২২ এপ্রিল আমি ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করি। কিন্তু পরে এটি পুরো ভারতে ছড়িয়ে যায়। লোকজন ভুলভাবে ভিডিওটিকে সাম্প্রতিক হামলার সাথে যুক্ত করার কারণে এটি প্রচুর ঘৃণার জন্ম দেয়। যেকারণে আমরা ভিডিওটি ডিলিট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি"। 

তাদের সামাজিক মাধ্যমের তাপ্রোফাইল অনুসারে, শেহরাওয়াত একজন পেশাদার ক্রিকেটার এবং শর্মা একজন ভিডিও কন্টেন্ট নির্মাতা। তারা দিল্লিতে বাস করেন। 

শেহরাওয়াত এএফপিকে ভিডিওটির মেটাডেটার একটি স্ক্রিনশট পাঠান, যা ভিডিওটি কাশ্মীর হামলার এক সপ্তাহ আগে ধারণ করার ইঙ্গিত দেয়। 

Image
এএফপির কাছে পাঠানো শেহরাওয়াতের স্ক্রিনশট

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ