বাংলাদেশে যানবাহন ভাঙচুরের পুরনো ভিডিও, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সহিংসতার নয়

২০২৫ সালের মার্চে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে  একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সহিংসতার ভিডিও বলে অসত্যভাবে দাবি করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ফুটেজটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি সহিংস রাজনৈতিক বিক্ষোভের।  

২৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে ফেসবুকে ছড়ানোর পর ৩৪ হাজার বারের বেশি ভিউ হওয়া ভিডিওটিতে লোকজনকে একটি সড়কে যানবাহনে আগুন দিতে এবং লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করতে দেখা যায়। 

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, "হে হিন্দু, আর কতদিন এভাবে চুপচাপ থাকবে ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ টা কে কি আপনারা মুসলিম রাষ্ট্র করতে চান যদি না চান তবে উত্তর দিন"।

Image
১৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহে সহিংস সংঘর্ষের পর একই ধরনের পোস্টে ফুটেজটি বাংলায় ফেসবুকে এবং হিন্দি ভাষায় এক্স-এ ব্যবহার হয়েছে।

ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় একটি মসজিদের পাশ দিয়ে একটি হিন্দু ধর্মীয় মিছিল অতিক্রম এবং "নমাজের স্থানের কাছে আতশবাজি নিক্ষেপের অভিযোগ" উঠলে সংঘর্ষ শুরু হয় (আর্কাইভ লিংক)।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ৫৭ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। 

তবে অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের সংঘর্ষের নয়। 

সিলেট অবরোধ

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটি থেকে কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর ইউটিউবে পোস্ট করা বাংলাদেশী সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে একই ফুটেজ পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

ইউটিউব ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, "সিলেটে অবরোধের সমর্থনে মশালমিছিল ও যানবাহন ভাঙচুর"। 

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির (বামে) এবং প্রথম আলোর ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অবরোধের সমর্থনে সিলেট শহরের সুবিদবাজার এলাকায় মশালমিছিল করেছেন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)'র নেতা-কর্মীরা (আর্কাইভ লিংক)। 

ঘটনাটি নিয়ে নিজেদের এক প্রতিবেদনে ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট ব্যবহার করেছেন ডেইলি সিলেট মিরর (আর্কাইভ লিংক)। 

জাতীয় নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো ধর্মঘট এবং পরিবহন অবরোধসহ ব্যাপক বিক্ষোভ করছিল (আর্কাইভ লিংক)। 

২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন এক বিপ্লবে হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটে।

সিলেটের সুবিদবাজার এলাকার গুগল স্ট্রিট ভিউর ছবির সাথে অসত্য পোস্টে ব্যবহৃত ফুটেজের মিল রয়েছে (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
অসত্য পোস্টে ব্যবহৃত ফুটেজের (বামে) এবং গুগল ম্যাপসে দৃশ্যমান অনুরূপ বৈশিষ্ট্যের (ডানে) যেসব মিল রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে একটি স্ক্রিনশট

২৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও নিজেদের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে অসত্য দাবিটি অস্বীকার করেছেন (আর্কাইভ লিংক)।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টাকে "জিরো টলারেন্স" হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে সতর্ক করে তাদের পোস্টে বলা হয়, "এই ধরনের অসত্য ভিডিও প্রচার করা গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরির স্পষ্ট প্রচেষ্টা। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ"। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ