অগ্নিকাণ্ডের অপ্রাসঙ্গিক ক্লিপকে বাংলাদেশের 'মিনি হজ্জ'র সাথে অসত্যভাবে জড়িয়ে প্রচার 

মক্কায় হজের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ হিসেবে পরিচিত বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের পাশের বাড়ি ঘরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দাবিতে গত ডিসেম্বরে অনলাইনে ছড়ানো গুজব উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। ইজতেমার সমাবেশ আয়োজনকারীদের দুই পক্ষের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর অপ্রাসঙ্গিক অগ্নিকাণ্ডের ক্লিপসহ অসত্য পোস্টটি ছড়ানো হয়। 

১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, "ইজতিমা মাঠের পাশে বাড়ি ঘরে আগুন"। পোস্টটিতে যুক্ত ভিডিও ক্লিপে একটি কর্দমাক্ত মাঠের পাশ ঘেঁষে থাকা বহু কুঁড়েঘরকে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডে জ্বলে যেতে দেখা যায়। 

ময়দান দখল নিয়ে ইজতেমা আয়োজনকারী তাবলিগ জামায়াতের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হলে পোস্টটি অনলাইনে ছড়াতে দেখা যায়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন (আর্কাইভ লিংক)। 

রাজধানী ঢাকার উত্তরে টঙ্গী শহরের তুরাগ নদীর তীরে জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষ এবার ইজতেমার আয়োজন করছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ ধর্মপ্রাণ লোক অংশ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে (আর্কাইভ লিংক)। 

ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের, যদিও সমাবেশে উত্তর আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া এমনকি চীনের মুসলিম দেশগুলি থেকেও হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

সৌদি আরবের মক্কায় যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিটের ব্যয় বহনে অপারগ দরিদ্র বাংলাদেশী মুসলিমদের কাছে অনুষ্ঠানটি "মিনি-হজ' হিসেবেও পরিচিত। 

Image
২২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ইজতেমা মাঠের কাছে অগ্নিকাণ্ডের দাবিতে অনুরূপ পোস্ট ফেসবুকেছড়ানো হয়েছে, কিন্তু পুলিশ দাবিটি উড়িয়ে দিয়েছেন। 

৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান এএফপিকে বলেন, "ডিসেম্বরের সংঘর্ষের সময় অগ্নিকাণ্ডের কোন ঘটনা ঘটেনি"। 

এছাড়া, কীওয়ার্ড সার্চসহ গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে ২ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ফেসবুকে শেয়ার করা পোস্টে ফুটেজটি খুঁজে পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের যে শহরে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিস্তৃত ক্যাম্প রয়েছে, সেটির প্রতি ঈঙ্গিত করে পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হঠাৎ আগুন"।

Image
অসত্য পোস্ট (বামে) এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ভিডিওটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এর আগে ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান একাত্তর টিভি এবং সংবাদ সংস্থা স্টোরিফুলের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একই জ্বলন্ত কুঁড়েঘরের একটু ভিন্ন কোণ থেকে নেওয়া ফুটেজের সাথে ক্লিপটির মিল পাওয়া যায় (আর্কাইভ এখানেএখানে)। 

আগুনে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে দুই শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে বলে একাত্তর টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

Image
অসত্য পোস্টের (বামে) ক্লিপ এবং একাত্তর টিভির প্রকাশিত ভিডিওটির(ডানে) মধ্যে যেসব মিল রয়েছে এএফপি কর্তৃক সেগুলো হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ