জলমগ্ন ভারতীয় মন্দিরের পুরনো ছবিকে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বন্যার সাথে সম্পৃক্ত করে প্রচার

ভারতের একটি মন্দিরের জলমগ্ন পুরনো ছবি সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে পুনরায় ছড়িয়ে সেটিকে আগস্টে ভয়াবহ বন্যায় ডুবে যাওয়া প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের বলে অসত্য ভাবে দাবি করা হয়েছে। ভারত নিজেদের বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে বাংলাদেশে এই দুর্যোগ হয়েছে বলে এসব পোস্টে অভিযোগ করা হয়। যদিও ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগটি অস্বীকার করেছে।

জলমগ্ন আঙ্গিনাসহ একটি মন্দিরের ছবি গত ২১ আগস্ট ২০২৪ ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনে বলা হয়, "বাঁধ খুলে দেওয়ার সময়ে ভারত হিসেব করে না ওপারে কারা 'হিন্দু' আর কারা 'মুসলমান'"।

Image
গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এ নেয়া অসত্য পোস্টটির স্ক্রিনশট

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বাংলাদেশ যখন অন্তত ৪০ জন নিহত হন এবং ৩০০,০০০ মানুষ জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন, তখন ছবিটি অনলাইনে ছড়ানো হয় (আর্কাইভ লিংক)।

ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তার সরকারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে বন্যার ঘটনা ঘটে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী ড মুহাম্মদ ইউনূস তার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে কাঙ্খিত নতুন নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত।

শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের একজন নেতা এবং ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্যাবিনেট সদস্য আসিফ মাহমুদ ভারতকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে 'বন্যা সৃষ্টির' জন্য অভিযুক্ত করেছেন (আর্কাইভ লিংক)।

তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, একই সপ্তাহে নিজেদের জলাধার এলাকা 'বছরের সর্বোচ্চ ভারী বৃষ্টিপাতের' মুখোমুখি হওয়াতে ভাটির দিকে পানি 'স্বয়ংক্রিয় ভাবে প্রবাহিত হয়েছে' (আর্কাইভ লিংক)।

একই সময়ে ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ত্রিপুরায় বন্যা ও ভূমিধ্বসে ২০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

ভারতের হিন্দু মন্দিরের ছবিটি অনুরূপ দাবিতে ফেসবুকে এক্স-এ ছড়ানো হয়েছে।

বিভ্রান্তিকর ছবি

গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে একটি পুরনো ছবি পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য হিন্দু'র একটি প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত একটি ছবিকে হরিজন্টালি উল্টে দেয়া হয় (আর্কাইভ লিংক)।

প্রতিবেদনটির একটি অংশে বলা হয়, "সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে হুমকির মুখে প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলার সময় বিশাল সংখ্যক অনুরাগী জড়ো হওয়া সুন্দরবনের সাগর দ্বীপের কপিল মুনি মন্দির। কয়েক বছরের মধ্যে ডুবে যেতে পারে মন্দিরটি।"

নিচে অসত্যভাবে ছড়ানো ছবি (বামে) এবং দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত ছবির (ডানে) মধ্যে সদৃশ্য বস্তুগুলোকে হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ছবি (বামে) এবং দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত ছবির (ডানে) মধ্যে সদৃশ্য বস্তুগুলোকে হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ছবিটি ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভারতের সংবাদ মাধ্যম ডাউন টু আর্থে ও প্রকাশিত হয়েছিল (আর্কাইভ লিংক)।

সুন্দরবন এলাকা ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত (আর্কাইভ লিংক)।

গুগল ম্যাপে অনুসন্ধান করে কপিল মুনি মন্দিরের অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে এএফপি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের সাগর দ্বীপের স্ট্রিট ইমেজারির সাথে যার মিল রয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

নিচে অসত্য পোস্টের ছবি (বামে) এবং তার গুগল স্ট্রিট ভিউর (ডানে) বৈশিষ্ট্যগুলো হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টের ছবি (বামে) এবং তার গুগল স্ট্রিট ভিউর (ডানে) বৈশিষ্ট্যগুলো হাইলাইট করে একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ