সামরিক যানের পুরনো ভিডিওকে অসত্যভাবে বাংলাদেশের সাথে সংশ্লিষ্ট করে প্রচার

বাংলাদেশে যখন ভয়াবহ ছাত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন সামরিক যান চলাচলের একটি ভিডিও অসত্য দাবিতে শেয়ার করে বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অস্থিতিশীলতা দমাতে সহায়তা করতে ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তবে ভিডিওটি বাংলাদেশে চলমান বিক্ষোভের অন্তত দুই বছর আগের। এছাড়া প্রতিবেশী বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যদের প্রবেশের বিষয়ে ভারতীয় সেনাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রবেশের অনুরোধের বিষয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোন অফিসিয়াল প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

গত ২২ জুলাই একটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে বলা হয়, "ভারতের সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। হাসিনা সরকার কারফিউ জারি করে বিক্ষোভ দমনে ভারতের সহায়তা চেয়েছে। রক্তপিপাসু হিন্দুত্ববাদী সরকার মুসলমানদের হত্যা করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখবে।"

Image

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে চির প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ে ভারতের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল দেখা যায়।

পোস্টে হিন্দুত্ববাদী সরকার বলতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনীতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কর্তৃক উৎসাহিত হিন্দু জাতীয়তাবাদকে বোঝানো হয়েছে।

ভাইরাল পোস্টে সুপারইম্পোজড টেক্সটসহ চলন্ত সামরিক যানের ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটির নিচের দিকে জুড়ে দেয়া সুপারইম্পোজড টেক্সটে বলা হয়েছে, "একাধিক ভারতীয় সামরিক যান পশ্চিম বঙ্গ বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে ঠুকতে দেখা গেছে।"  

বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভে বহু বছর পর যখন চরম অস্থিতিলী রূপ নেয় তখন একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানে এবং পাকিস্তান ভিত্তিক এক্স একাউন্টে এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশের মধ্যে বৈরিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

এর আগে ভিডিওটি ভারত ভিত্তিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ফরেনসিক রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স সেন্টার (ডিএফআরএসি) যাচাই করেছে (আর্কাইভ লিংক)।

বাংলাদেশের বৃহত্তম দৈনিক সংবাদপত্র প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক দিনের সহিংসতায় আটকের সংখ্যা ৯,০০০ ছাড়িয়েছে। পুলিশ এবং হাসপাতালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির তৈরি তালিকা অনুযায়ী, পুলিশ সদস্যসহ সহিংসতায় অন্তত ২০৫জন নিহত হয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে 'অভ্যন্তরীন' বিষয় বলে মন্তব্য করেছে ভারত এবং ২৯ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত সরকারকে অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশে ভারতের সৈন্য পাঠানোর কোন অফিসিয়াল প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

গত ২১ জুলাই ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, তারা ৪,৫০০ জনের বেশি ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরতে সাহায্য করেছে (আর্কাইভ লিংক)।

একই সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ পরিহার করার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে (আর্কাইভ এখানে)।

পুরাতন চিত্র

গুগলে ভিডিওটির কীফ্রেইম নিয়ে রিভার্স ইমেজ এবং কীওয়ার্ড সার্চে একই ক্লিপ পাওয়া যায়, যা ফেসবুকে ২০২২ সালের ২৩ জুন তারিখে প্রকাশিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির সুপারইম্পোজড টেক্সটের আংশিক অনুবাদ হচ্ছে 'আর্মি' এবং 'লং লিভ ইন্ডিয়া'।

নিচে অসত্য পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং ২০২২ সালের ক্লিপের (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
অসত্য পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং ২০২২ সালের ক্লিপের (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

বিভিন্ন গণমাধ্যমে যানবাহন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অশোক লেল্যান্ড কর্তৃক ভারতীয় সামরিক ট্রাকের ডিজাইনের সাথে অসত্য পোস্টের যানবাহনটির এখানে এখানে মিল দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ