এটি "বাংলাদেশের নিরাপত্তা সভায়" ভারতীয় কর্মকর্তার যোগদানের ছবি নয়

মারাত্মক অস্থিতিশীলতায় যখন বাংলাদেশ প্রকম্পিত ঠিক তখন বাংলাদেশের তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা সভার একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। ছবিতে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে বলে এসব পোস্টে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে ছবিতে যে ব্যক্তিকে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তিনি শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা। এএফপির হাতে আসা ওই সভায় অংশগ্রহণকারীদের অফিসিয়াল তালিকায় ভারতীয় কোন কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিলনা।

গত ২৩ জুলাই একটি ফেসবুক পোস্টে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে বলা হয়, "তিন বাহিনীর প্রধান সহ এত গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার কেন?"

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে পোস্টে বলা হয়, "জানতে চায় #পশুলীগের পশুর বাচ্চাদের কাছে থেকে?"।

ছবিতে শেখ হাসিনাকে তার বাম পাশে একটি লাল বৃত্তে হাইলাইট করে চিহ্নিত ব্যক্তিটিসহ আটজনের সাথে মিটিং করতে দেখা যায়।

Image
২৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পদ্ধতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যখন মারাত্মক অস্থিতিশীল আকার ধারণ করে তখন ছবিটি অনলাইন ছড়ানো হয়।

পুলিশ ও হাসপাতালের রিপোর্টের ভিত্তিতে এএফপির করা হিসাব অনুযায়ী, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ও সহিংসতায় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০৫ জন নিহত হয়েছেন।

শেখ হাসিনার সাথে ব্যাপক উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা দিল্লি বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে দেশটির 'অভ্যন্তরীন' বিষয় দাবি করে এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

বাংলাদেশে বাস করা দেশটির নাগরিকদের স্থানীয় চলা ফেরায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে নাগরিকদের দেশে ফিরতে সহায়তা দিয়েছে ভারত (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

একই ধরনের পোস্টে ছবিটি ফেসবুকে এবং থ্রেডে ছড়িয়ে প্রশ্ন করা হয় যে, কেন ভারতীয় হাইকমিশনারকে বৈঠকে আসতে দেওয়া হল।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সার্চ ইঞ্জিন গুগলে এবং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কীওয়ার্ড সার্চে ছবিটি পাওয়া যায়, যা আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে গত ২২ জুলাই শেয়ার করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

পোস্টে বলা হয়, "বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (২১ জুলাই ২০২৪) প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করেন।"

'বঙ্গবন্ধু' শব্দটি শেখ হাসিনার পিতা এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এক ধরনের সম্মান আন্তরিকতাসূচক সম্বোধন।

নিচে অসত্য পোস্টে শেয়ার হওয়া ছবি (বামে) এবং আওয়ামী লীগে ফেসবুক পেইজের পোস্টের ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল: 

Image
অসত্য পোস্টে শেয়ার হওয়া ছবি (বামে) এবং আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজের পোস্টের ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ওই মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের একটি তালিকা ইমেইলের মাধ্যমে এএফপিকে পাঠানো হয়। তালিকায় রয়েছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মন্ত্রী পরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, নৌবাহিনীর প্রধান নাজমুল হাসান, সামরিক সচিব কবির আহমেদ এবং সামরিক কর্মকর্তা ওয়াকার-উজ-জামান, হাসান মাহমুদ খান, মিজানুর রহমান শামিম এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) মহাপরিচালক নাজমুল হাসান (আর্কাইভ লিংক)।

তারিক আহমেদ সিদ্দিক এর ২০১৮ সালের একটি ছবির সাথে ভাইরাল হওয়ার ছবিটি তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাম পাশে বসা ব্যক্তিটি তিনিই ছিলেন (আর্কাইভ লিংক)। 

Image
শেখ হাসিনার মিটিংয়ে তারিকের একটি ছবি (বামে) সাথে ২০১৮ সালে তার অন্য একটি ছবির (ডানে) তুলনা

অন্যদিকে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে ঢাকায় যোগ দেয়া প্রণয় ভার্মার সঙ্গে তারিকের শারীরিক কোন মিল নেই (আর্কাইভ লিংক)।

Image
শেখ হাসিনার মিটিংয়ে তারিকের একটি ছবি (বামে) সাথে ঢাকা নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারের একটি ছবির (ডানে) তুলনা

বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য খণ্ডন করে এএফপির আরো প্রতিবেদন পড়ুন এখানে এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ