বাংলাদেশে সংবাদপত্রের বরাতে ছাত্র আন্দোলনে নিহতের অসত্য সংখ্যা প্রচার

২৪ জুলাই পর্যন্ত এএফপি'র তৈরি তালিকা অনুযায়ী, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতায় বাংলাদেশে অন্তত ১৭৪ জন নিহত হয়েছে। তবে কয়েক হাজারবার ছড়ানো ফেসবুক পোস্টে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে যে, শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র প্রথম আলোর প্রতিবেদনে সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সহিংসতায় ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক জানিয়েছেন যে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো মৃত্যুর সংখ্যা তারা কখনোই প্রকাশ করেনি।

২২ জুলাই ১১৫,০০০ বেশি সদস্যের একটি গ্রুপে শেয়ার করা একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "শহীদের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়ে গেছে, সূত্র প্রথম আলো।"

Image

চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ বাংলাদেশে ব্যাপক অস্থিরতায় রুপ নেয়, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের মেয়াদকালে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতায় পরিণত হয়। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে কারফিউ জারি করা হয় এবং দেশ জুড়ে সেনা মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি দেশব্যাপী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের মাধ্যমে তথ্যের আদান প্রদান মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক কোটি ৮০ লাখ তরুণ কর্মহীন। ২০১৮ সাল থেকে স্থগিত থাকা কোটা পদ্ধতিকে পুনরায় বহালের বিষয়ে গত জুনে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ তীব্র চাকরি সংকটে থাকা এসব তরুণ স্নাতকদের গভীরভাবে হতাশ করেছে।

ব্যাপক বিক্ষোভের তোপে সুপ্রিম কোর্ট চাকরিতে কোটার পরিমান ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাত শতাংশ করেছে। সাত শতাংশের বেশিরভাগই ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতিনাতনীদের জন্য রাখা হয়েছে।

একই ফেসবুক পোস্ট কয়েক হাজারবার এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

ভিত্তিহীন সংখ্যা

তবে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ কিংবা ইউটিউব চ্যানেলের কোথায়ও কোটা বিরোধী আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় ৯০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি (আর্কাইভ এখানে, এখানে এখানে)।

পত্রিকাটির ২৫ জুলাইয়ের ছাপা সংস্করণের এক প্রতিবেদনে ২০১ জনের প্রাণহানির কথা বলা হয়।

Image
প্রথম আলোর ২৫ জুলাই প্রকাশিত মৃতের সংখ্যার প্রতিবেদনটি হাইলাইটসহ প্রথম পৃষ্ঠার ছবি

পুলিশ এবং বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য নিয়ে এএফপির করা হিসাব অনুযায়ী ২৫ জুলাই পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১৯৩ জন নিহত হয়েছেন।

পুলিশ ও রোগীর আত্মীয়দের দেয়া তথ্য এএফপি সাংবাদিকরা পৃথক পৃথক হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করে সহিংসতায় নিহতদের এই পরিসংখ্যানটি পেয়েছেন। এছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ সরাসরি মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো দাবিগুলো অস্বীকার করেছেন।

২৩ জুলাই তিনি এএফপিকে বলেন, "আজকে আমাদের ছাপা পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী সর্বশেষ মৃত্যুর সংখ্যা ১৮৭"। যদিও পত্রিকাটি পরে (২৮ জুলাই) মৃত্যুর সংখ্যা আপডেট করে ২১০ লিখেছে।

তিনি বলেন, "১৯ জুলাই ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে আমাদের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে নিউজ আপডেট বন্ধ করতে হয়েছিল। আমরা এখন শুধু আমাদের পত্রিকার ছাপা কপি প্রকাশ করছি।"

তিনি বলেন, মৃতের সংখ্যা জানতে সংবাদপত্রটি স্থানীয় হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ