তুরস্কে তোলা পুরনো ছবিকে অসত্যভাবে গাজা যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রচার

কবরের উপর রেখে যাওয়া একটি গোলাপী পোশাকের হৃদয় বিদারক ছবি বারবার সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়িয়ে অসত্যভাবে গাজার চলমান যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। চলমান সংঘাতে হাজার হাজার শিশু নিহত হলেও, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ছবিটি প্রকৃত পক্ষে তুরস্কের। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগ থেকে ছবিটি অনলাইনে ছড়িয়েছিল।

গত ১৭ জুন ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে বলা হয়, "একজন ফিলিস্তিনী বাবা, মেয়ের কবরে ঈদের জামা রেখে গেছেন। ফিলিস্তিন নিয়ে ভাবলেই ঈদের আনন্দ বিষাদে ভরে যায়।"

Image
১১ জুলাই ২০২৪ তারিখে নেয়া অসত্য ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের ঈদু-আল-আযহার ছুটি উদযাপনের মাঝে অনুরূপ ফেসবুক পোস্টে ছবিটি এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

একই দাবিতে ছবিটি মালয়েশিয়ায় এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মিলিট্যান্ট গ্রুপ হামাসের মধ্যকার সংঘাতের কারণে ঈদের উৎসব বিষাদের মেঘে ঢেকে যায়।

গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ ফিলিস্তিনের মিলিট্যান্ট গ্রুপ হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে নজিরবিহীন হামলা চালালে চলমান যুদ্ধ শুরু হয়। ইসলায়েলের তথ্যের উপর ভিত্তি করে এএফপির তৈরি তালিকা অনুযায়ী, ওই হামলায় ১ হাজার ১৯৫ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক।

হামাস মিলিট্যান্টরা আরো ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের ১১৬ জন এখনো গাজায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি বাকি জিম্মিদের মধ্যে ৪২জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলের পাল্টা সামরিক অভিযানে গাজার অন্তত পক্ষ্যে ৩৮ হাজার ২০০ লোক নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত ওই অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তবে অনলাইনে ছড়ানো ছবিটি যুদ্ধ শুরুর আগে তুরস্কে তোলা হয়েছে।

তুরস্কের কবরস্থান

গুগলে রিভার্স ইমেজ এবং কিওয়ার্ড সার্চে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস আগে ২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল একটি 'এক্স' পোস্টে ছবিটি পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)।

তুর্কি ভাষার পোস্টটিতে বলা হয়: "এই ঈদে ৮ বছর বয়সী জাহিদ তার ভাইবোনের জন্য একটি ঈদের পোশাক কিনে রেখে গেছে। কিছু ছবি এবং স্মৃতি আমার জীবনে কাগজ কাটা দাগের মতো থেকে যায়।"

Image
২০২৩ সালের এপ্রিলে এক্স এ শেয়ার করা পোস্টের একটি স্ক্রিনশট

অন্য একটি রিভার্স ইমেজ সার্চে একটি টিকটক ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে একই কবরস্থান দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওটির অবস্থান হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের আদিয়ামান শহরে কথা বলা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

অসত্য পোস্টে শেয়ার করা ছবির সংশ্লিষ্ট দৃশ্য এবং টিকটক ভিডিওর দৃশ্য নিশ্চিত করে যে দুটি ভিডিও একই স্থানের।

Image
অসত্য পোস্টের ছবি(বামে) এবং টিকটক ভিডিও (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত আনাদোলু নিউজ এজিন্সির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তেয়িত হাট্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, ছবিটি আদিয়ামানের নতুন কবরস্থানে ধারণ করা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

কবরস্থানের গুগল স্যাটেলাইট ইমেজারির সাথে অসত্য পোস্টের ছবি তুলনা করে এএফপি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে (আর্কাইভ লিংক)।

অসত্যভাবে শেয়ার করা ছবির (বামে) এবং গুগল আর্থ ইমেজারির (ডানে) মধ্যে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগুলোকে হাইলাইট করে এএফপির তৈরি স্ক্রিনশট:

Image

দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে ৭.৮ মাত্রার ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পর কবরস্থানটি মৃত দেহে ছেঁয়ে যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ভূমিকম্পে তুরস্কে অন্তত ৫৩,০০০ জন এবং প্রতিবেশি সিরিয়ায় ৬,০০০ জন নিহত হয়েছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ