কর্দমাক্ত একদল জলহস্তির পুরানো এই ক্লিপটি বাংলাদেশে ধারণ করা হয়নি

একটি কর্দমাক্ত খালে অনেকগুলো জলহস্তির পুরনো ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বারবার শেয়ার করে এটিকে ২০২৪ সালের এপ্রিলে শ্বাসরুদ্ধকর তাপপ্রবাহ চলাকালে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে একটি জলাশয়ে ধারণ করা হয়েছে বলে অসত্যভাবে প্রচার করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে ভিডিওটি উগান্ডার ন্যাশনাল পার্কে তোলা বলে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জনবহুল শহর সাতক্ষীরার একটি খালের প্রতি ইঙ্গিত করে ২৯ এপ্রিল ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: "সাতক্ষীরা শুকিয়ে যাওয়া সায়েরের খালে হঠাৎ এ কিসের দেখা মিলালো।"

Image

পোস্টটিতে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, কাদা মাটিতে জলহস্তিকে ঢেউয়ের মতো নড়তে দেখা যায়।

গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ যখন তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো, ভিডিওটি তখন অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাপপ্রবাহের তীব্রতায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন এবং তারা দেশব্যাপী স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।

১৯৪৮ সালে আবহাওয়ার তথ্য সংরক্ষণ শুরুর পর থেকে গত এপ্রিলে দেশের সবচেয়ে বেশি গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

বিশেষায়িত বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহ ঘন ঘন, তীব্র ও দীর্ঘ হয়ে উঠছে।

একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে অন্যত্র এখানে এখানে ছড়ানো হয়েছে।

তবে ভিডিওটি বাংলাদেশের তাপপ্রবাহের সাথে সম্পৃক্ত নয়।

উগান্ডার ন্যাশনাল পার্ক

ভিডিওটির কীফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, ভিডিওটি এর আগে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর আরো উচ্চ রেজুলেশনসহ উগান্ডা ভিত্তিক ওয়াইল্ডফ্রেন্ডস আফ্রিকা নামের একটি ট্যুর এজেন্সি ফেসবুকে শেয়ার করেছিল (আর্কাইভ লিংক)।

ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনের একাংশে বলা হয়, "আফ্রিকার প্রখর সূর্যের তাপ থেকে লোমহীন শরীরকে ঠাণ্ডা করার জন্য একটি কর্দমাক্ত জলকুপে নিজেদের ভিজিয়ে নিচ্ছে কিছু জলহস্তি।"

এতে আরো বলা হয়, ভিডিওটি উগান্ডার কুইন এলিজাবেথ ন্যাশনাল পার্কে ধারণ করা হয়েছে।

নীচে অসত্য দাবিযুক্ত পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং ২০২২ সালের ক্লিপের (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

গত ২০ মে ওয়াইল্ডফেন্ডস আফ্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জোসেফ আবায়ো এএফপিকে বলেন: "প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি ২০২২ সালে আমি ধারণ করেছি এবং একই স্থানের এমন আরো অনেক ভিডিও আমাদের কাছে আছে।"

ওয়াইল্ডফেন্ডস আফ্রিকার ফেসবুক পেইজে একই ধরণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যা একই স্থানে ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর ধারণ করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

আবায়ো আরো বলেন, "যারা ভিডিওটিকে বাংলাদেশের বলে দাবি করছেন, তারা আসলে তাদের দেশের পর্যটনের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য এমনটি করছেন।"

উগান্ডার কুইন এলিজাবেথ ন্যাশনাল পার্ক সর্ম্পকিত ভিডিও এজেন্সি নিউজফ্লেয়ারের একটি প্রতিবেদনেও ভিডিওটি প্রকাশিত হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

স্থানগত তথ্যে বিভ্রান্তি

ফেসবুকের অসত্য পোস্টে শেয়ার করা ভিডিওটিতে একটি কর্দমাক্ত জলাভূমি দেখা যায়, যা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলী জনবহুল শহর সাতক্ষীরার ভেতর দিয়ে বেয়ে যাওয়া প্রাণ সায়ের খালের সম্পূর্ণ বিপরীত।

এছাড়া সাতক্ষীরাতে কোনো নথিভুক্ত জলহস্তি নেই।

এএফপি গুগল ম্যাপে প্রাণ সায়ের খালের ছবি যাচাই করে দেখেছে যে, অসত্য পোস্টে শেয়ার করা ভিডিওটির সাথে ওই খালের কোনো মিল নেই।

নীচে অসত্য প্রেক্ষাপটে অনলাইনে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং প্রাণ সায়ের খালের গুগল স্ট্রিট ভিউর একটি ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

বাংলাদেশের তাপপ্রবাহ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য খণ্ডন করে এএফপির তৈরি আরো প্রতিবেদন পড়ুন এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ