কিডনি দানের পুরনো বিভ্রান্তিকর পোস্ট নতুন করে ছড়াচ্ছে ফেসবুকে
- প্রকাশিত 18 জানুয়ারি 2024, 11:54
- 3 এক্স মিনিটে পড়ুন
- লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
কপিরাইট © এএফপি ২০১৭-২০২4। এই কন্টেন্টের যেকোন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
গত ১৫ জানুয়ারি ফেসবুকে এখানে আপলোড করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়: "কিডনি ট্রান্সপ্লেন্ট করার জন্য যদি কেউ ভারতে অবস্থান করছেন কিন্তু কিডনি পাচ্ছেন না তাদের জন্য এই পোস্ট। বর্তমানে ৪টি কিডনি আছে। মিঃ সুধীর এবং তার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণে, যিনি গতকাল দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। ডাক্তার তাদের ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেছেন। মিস্টার সুধীর হলেন B+ এবং তাঁর স্ত্রী O+। তাদের পরিবার মানবতার জন্য তাদের কিডনি দান করতে চায়।"
পোস্টটিতে কিডনির জন্য যোগাযোগ করার জন্য এই তিনটি "9837285283, 9581544124, 8977775312" ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে।
একই ডোনারের তথ্য এবং ফোন নম্বর দিয়ে অপর একটি পোস্ট আমেরিকায় বসবাসরত নাগরিকদের উদ্দেশ্য শেয়ার করা হয় এখানে।
পোস্টের ক্যাপশনে বলে হয়: "বাংলাদেশ আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশনের গ্রুপে এই কিডনি সংক্রান্ত খবরটি পেয়েছি। নিউইয়র্কে তথা আমেরিকায় বসবাসরত নাগরিকদের উদ্দেশ্য শেয়ার করলাম। পাশাপাশি এই পরিবারের সদস্যদের প্রতি শোক শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ সকলের হেফাজত করুন।"
এই অসত্য দাবিটি ফেসবুকে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এখানে এবং ২০২২ সালের এপ্রিলে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের পাশাপাশি পোস্টটি সিংহলি ভাষায় শ্রীলঙ্কায় এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়।
অঙ্গদান
বাংলাদেশের ইতিহাসে গত বছরের জানুয়ারিতে প্রথম ব্রেন-ডেথ রোগির অঙ্গ অন্য চার ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং জেনারেল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান ডা. মো. হাবিবুর রহমান।
হাবিবুর রহমান হাবিবুর রহমান এএফপিকে জানান, দুই ধরণের অঙ্গদান (অর্গান ডোনেশন) হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে লিভিং অর্গান ডোনেশন, আর অন্যটি হচ্ছে ক্যাডেভার বা নন-লিভিং তথা ব্রেন ডেথ অর্গান ডোনেশন।
ক্যাডেভারিক পদ্ধতিতে অঙ্গদান হচ্ছে কোনো রোগির ব্রেন ডেথ তথা স্ট্রোক, মস্তিষ্কে আঘাত, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার বা অন্য কোনো কারণে ব্রেনস্টেমের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে আইসিইউতে কৃত্রিম ভেন্টিলেশন রাখা। ভেন্টিলেশন বন্ধ করলে ওই রোগি অন্য স্বাভাবিক মৃত দেহের মতোই।
তিনি বলেন: "বাংলাদেশের সব হাসপাতালের আইসিইউর সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। আইসিইউতে কোন রোগির ব্রেন ডেথ হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে আমাদের ক্যাডেভার সেলকে জানায়। এরপর আমরা অঙ্গ গ্রহিতা নির্বাচন করে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করি। গত এক বছরে ৩৫টা চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এজন্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডোনার খোঁজার দরকার হয় না।"
পুরনো প্রতারণা
অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টে যোগাযোগের জন্য দেয়া তিনটি ফোন নম্বরের একটিও বাংলাদেশি নয়।
বাংলাদেশ ১১ সংখ্যার মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে। এসব ফোন নম্বরের শুরুতে প্রিফিক্স হিসেবে "০" থাকে এবং পরের দুই সংখ্যা মোবাইল অপারেটরের কোড হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এএফপি অসত্য দাবিতে শেয়ার করা পোস্টের মোবাইল নম্বরে চেষ্টা সত্ত্বেও কল করতে পারেনি। নম্বরগুলোর মধ্যে দুটি অচল এবং অপর নম্বরটিতে ব্যস্ত সংকেত দেখা যায় এবং কোনো রিং হয়নি।
নম্বরগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ করে ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বুম লাইভ এবং ফ্যাক্টলি-র এর আগে করা দুটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুও এই অসত্য দাবিটি নিয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এখানে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এক্স-এ (সাবেক টুইটার) কীওয়ার্ড সার্চে ২০১৭ সালের আগে ভারতীয় ইউজারদের করা একই ধরনের ইংরেজি পোস্ট পাওয়া যায়।
ভারত থেকে এসব নম্বরে চেষ্টা করেও কল করা যায় নি। তবে নম্বরগুলোর মধ্যে একটি ভারতের উত্তর প্রদেশের নেফ্রোলজিস্ট ডা. সন্দীপ কুমার গর্গের মোবাইল নম্বর হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল।
ডা. গর্গ এএফপিকে জানান, ফেসবুক পোস্টের বার্তাটি অসত্য, যেটি প্রায় ৯ বছর ধরে ছড়ানো হচ্ছে।
এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?
আমাদের সাথে যোগাযোগ