বাল্ট্রা দ্বীপে কোন গাছপালা পশুপাখি না থাকা ও বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবি অসত্য

চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে অনুপ্রাণিত করা বিখ্যাত ইকুয়েডরীয় দ্বীপপুঞ্জের বাল্ট্রা দ্বীপ বিরল গাছপালা এবং প্রাণীর আবাসস্থল। তবে ২০২৪ সালের মার্চে সম্পূর্ণ বিপরীত ও অসত্য দাবি সহকারে অনলাইনে এবং সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়। দ্বীপটিতে কোন বৃষ্টিপাত হয় না বলেও বিভ্রান্তিকরভাবে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দ্বীপটিতে ঐতিহাসিকভাবে বছর জুড়ে স্বল্প মাত্রার বৃষ্টিপাতের নজির রয়েছে।

১৪ মার্চ ২০২৪ একটি ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়: "যে দ্বীপে বৃষ্টি পড়েনা, পাখিও উড়েনা।"

পোস্টটির ক্যাপশনের অপর একটি অংশে বলা হয়েছে: "অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি।  বাল্ট্রার পাশ দিয়ে প্রাণী হেঁটে গেলেও এ দ্বীপে প্রবেশ করেনা।"

এতে আরো বলা হয়, "আরেকটি রহস্য হলো ওই দ্বীপটির চারপাশে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এর ভেতরে কোনো বৃষ্টির ফোটা পড়ে না।"

Image

৮০ বারের বেশি শেয়ার হওয়া পোস্টটিতে ইকুয়েডরীয় দ্বীপপুঞ্জের বাল্ট্রা দ্বীপ এবং পাশবর্তী নর্থ সেমুর দ্বীপের একটি গুগল স্যাটেলাইট ছবি রয়েছে।

একই ছবি অনুরুপ অসত্য দাবিতে ফেসবুকে এখানে এখানে এবং কিছু বাংলা সংবাদমাধ্যম এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

ভিত্তিহীন দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ইসলাম এএফপিকে জানিয়েছেন, দ্বীপটির ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এর পরিবেশ তুলনামূলক রুক্ষ। কিন্তু সেখানে উল্লেখযোগ্য জীববৈচিত্র রয়েছে (আর্কাইভ এখানে)।

তিনি বলেন, "এটি একটি রুক্ষ পরিবেশ সম্পন্ন ভৌগলিক সত্তা। কিন্তু গাছপালা ও পশুপাশিসহ দ্বীপটিতে সবকিছুই রয়েছে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মনজুরুল হাসান বলেন, দ্বীপটি নিয়ে অনলাইনে যে দাবি করা হয়েছে তা ঠিক নয় (আর্কাইভ এখানে)।

তিনি বলেন, "ভলকানিক অঞ্চলের ভূখণ্ড হিসেবে, দ্বীপটির পরিবেশ কিছুটা শুষ্ক এবং লবণাক্ততার বিষয় রয়েছে। এতে দ্বীপটিতে অন্যান্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপের চেয়ে কম গাছপালা এবং পশুপাখি রয়েছে।"

বাল্ট্রা দ্বীপটি হচ্ছে বিরল গাছপালা এবং পশুপাখির জন্য ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এলাকা হিসেবে বিখ্যাত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অংশ। দ্বীপটিতে সামুদ্রিক ইগুয়ানা, ফ্লাইটলেস করমোরেন্টস, বিশালাকার কাছিম এবং বিশাল ক্যাকটি দেখা যায়, যা চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে অনুপ্রাণিত করেছিলো (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

সমতল এবং শুষ্ক দ্বীপটি সাউথ সেমুর হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু যুক্তরাজ্য নিবন্ধিত গ্যালাপাগোস কনজারভেশন ট্রাস্টের মতে, দ্বীপটি ক্যাকটি এবং পালো সান্টো গাছে ভরা (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

দাতব্য সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, দ্বীপটিতে পর্যটকরা গ্যালাপাগোস সী লায়ন, ল্যান্ড ইগুয়ানা এবং ডারউইনের ফিঞ্চ পাখিসহ কিছু আইকনিক প্রজাতি দেখতে পাবেন।

গুগল ম্যাপে দ্বীপটির স্ট্রিট ভিউ-র ছবিতে শুষ্ক এবং সমতল ভূমি দেখা যায়।

গ্লোবাল বার্ড ডাটাবেস এভিবেস এর তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপটিতে ৯৪ প্রজাতির পাখি খুঁজে পাওয়া গেছে (আর্কাইভ এখানে)।

ইকুয়েডরের পরিবেশ, জল এবং পরিবেশগত পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা দ্বীপটিতে নীল পায়ের বুবি পাখির একটি নতুন প্রজাতি খুঁজে পেয়েছে (আর্কাইভ এখানে)।

বৃষ্টিপাত

ভ্রমণ বিষয়ক ফ্রান্স ভিত্তিক সাইট হোয়ার এ্যান্ড হোয়েন-র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ১১৩ মিলিমিটার এবং আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে সর্বনিম্ন তিন মিলিমিটার বৃষ্টিপাতসহ বছর জুড়ে দ্বীপটিতে মৃদু জলবায়ু বিরাজ করে (আর্কাইভ এখানে)।

বাল্ট্রা দ্বীপে প্রবল বৃষ্টিপাতের বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে পোস্ট করেছে ইকুয়েডরের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা আইএনএএমএইচআই (আর্কাইভ এখানে)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ