ইসলায়েলি পণ্য বর্জন আন্দােলনের মধ্যে বারকোড নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি সামাজিক মাধ্যমে

গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে বেশ কিছু দেশ থেকে ইসরায়েলি পণ্য এবং সেবা বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। এরপর একটি পণ্য কোন দেশে উৎপাদন হয়েছে, তা বারকোড দেখে নির্ধারণ করা যায় এমন পুরনো দাবি নতুন করে ছাড়ানো হচ্ছে। তেমনই একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে, কোন পণ্যের বারকোডের শুরুতে '৭২৯' সংখ্যা থাকলে বোঝা যাবে যে, পণ্যটি ইরায়েলে তৈরি করা হয়েছে। তবে দাবিটি বিভ্রান্তিকর; প্রকৃতপক্ষে বারকোডের শুরুর এই তিনটি সংখ্যা দিয়ে বোঝা হয় যে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি তার পণ্যটি বিশ্বব্যাপী বারকোড প্রদানকারী অলাভজনক সংস্থা জিএস১ এর ইসরায়েলি সদস্য সংস্থার সাথে রেজিস্ট্রার্ড করেছে। জিএস১ এএফপি ফ্যাক্ট চেক'কে জানিয়েছে, বিশ্বের যে কোনো দেশে যে কোনো কোম্পানি সারা বিশ্বে তাদের ১১৬টি সদস্য সংস্থার যে কোনটির সাথে তালিকাভুক্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি কোন দেশ ভিত্তিক এবং কোন দেশে তার পণ্যটি উৎপাদন হয়, সেটা বিবেচ্য নয়।

১১ অক্টোবর ২০২৩ ফেসবুকে এখানে একটি বারকোডের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে বলা হয়: "ইসরাইলি পন্য কেনাকাটা থেকে বিরত থাকুন। ইসরাইলী পণ্য চেনার সহজ উপায়। বারকোডের শুরুতে যদি ৭২৯ সংখ্যা থাকে,বুঝে নিবেন এটা ইসরাইলী পণ্য।"

Image

একই বারকোডের ছবিটি টিকটকে এখানে শেয়ার করে 'ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করার' জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া ছবিটি ফেসবুকে এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ইতিহাসে ভয়ঙ্কর হামলা চলায় হামাস মিলিট্যান্টরা। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির তৈরি তালিকা অনুযায়ী, নজিরবিহীন ওই হামলায় ১,১৪০ নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

প্রতিশোধ নিতে গাজায় পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। টানা বোমা হামলায় গাজা উপত্যকার বৃহৎ অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে অন্তত ২৩,২১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশ নারী এবং শিশু (আর্কাইভ লিংক)।

যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সারাবিশ্বে বিক্ষোভ চলছে। এদিকে পণ্য ও সেবা বিক্রির অর্থ থেকে সহায়তা পেতে পারে এমন ধারণ থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের প্রচারাভিযান চলছে (আর্কাইভ লিংক)।

তবে প্যাকেটের মোড়কে কিছু নির্দিষ্ট বারকোড দেখে ইসরায়েলি পণ্য বোঝায় যায় এমন দাবিতে ছড়ানো পোস্টগুলো বিভ্রান্তিকর।

বারকোড প্রিফিক্স

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানিকে বারকোডের প্রিফিক্স সরবরাহকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জিএস১ -র তথ্য অনুযায়ী, বারকোডের প্রথম কিছু নম্বর দিয়ে কোন পণ্য কোন দেশে উৎপাদন হয়েছে তা নির্ধারণ করে না।

প্রতিষ্ঠানটি তার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করে যে, "জিএস১ ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলো পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে তাদের পণ্য উৎপাদন করতে পারে।"

বিষয়টি সংস্থাটির ওয়েবসাইটের স্বয়ঃক্রিয় প্রশ্ন উত্তর বিভাগেও উল্লেখ করে বলা হয়েছে, "জিএস১ প্রিফিক্স কোন পণ্য নির্দিষ্ট দেশে বা নির্দিষ্ট উৎপাদককে নির্দেশ করে না, বরং পণ্যটি পৃথিবীর যে কোন দেশে উৎপাদন হতে পারে।"

Image

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১১৬টি সদস্য সংস্থার সাথে জিএস১ কাজ করে থাকে। বারকোডের প্রিফিক্স ৭২৯ জিএস১-র ইসরায়েলি সদস্য সংস্থাগুলোর জন্য নির্ধারিত (আর্কাইভ এখানে)।

৮ জানুয়ারি ২০২৪, জিএস১ -র মুখপাত্র কার্লোস কারনিসেরো উরাবায়েন এএফপি ফ্যাক্ট চেককে বলেন: "বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো জিএস১-র ১১৬টি সদস্য সংস্থার মধ্য থেকে তাদের পছন্দ মতো যে কোন একটি সংস্থাকে বেছে নিতে পারে। এখানে কোম্পানিগুলো কোন দেশ ভিত্তিক এবং কোন দেশ থেকে তারা তাদের পণ্যগুলো উৎপাদন করতে চায় তা বিবেচ্য নয়।"

তিনি বলেন: "একটি কোম্পানির অবস্থান যে কোন দেশেই হউক না কেন, এটি চাইলে জিএস১ ইসরাইল বা এর ১১৬ সদস্য সংস্থার সাথে কাজ করতে পারবে।"

"জিএস১ প্রিফিক্স তথা বারকোডের প্রথম তিন অংক নির্ভর করে কোম্পানিটি জিএস১ এর কোন সদস্য সংস্থাকে নির্বাচন করেছে, তার ওপর।"

উরাবায়েন আরো বলেন, " পণ্যের বারকোড বন্টনের জন্য যে কোন কোম্পানি জিএস১-র সদস্য সংস্থাগুলোর মধ্য থেকে একাধিক সংস্থাকেও নির্বাচন করতে পারে।"

ইতোপূর্বে বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের সাথে সম্পৃক্ত করে বারকোড সংক্রান্ত অসত্য বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়। বিশেষ করে ২০২১ সালে জেরুজালেম সংহিসতার এবং ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময়।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ