আলাস্কা বিক্রিকে 'অবৈধ' ঘোষণা করে রাশিয়া ডিক্রি জারি করেছে বলে অসত্য খবর প্রচার

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্বাক্ষরিত একটি ডিক্রিতে ১৮৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রুশদের আলাস্কা ভূখণ্ড বিক্রি করাকে 'অবৈধ' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে- এমন অসত্য তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। এএফপি ফ্যাক্ট চেক দেখেছে যে, ডিক্রিটি শুধুমাত্র বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রাশিয়ান সম্পদ খুঁজে পেতে এবং এই কাজে আইনি সুরক্ষা দিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে আলাস্কা বিক্রি কিংবা অন্য কোনো ভূখণ্ডের বিষয় উল্লেখ ছিলো না।

২৩ জানুয়ারি ফেসবুকে এখানে আপলোড করা একটি পোস্টে বলা হয়, "আমেরিকার আলাস্কা প্রদেশটি ১৮৬৭ সালে রাশিয়া আমেরিকাকে বিক্রি করেছিল। পুতিন ১৮৬৭ সালে আমেরিকার কাছে আলাস্কা বিক্রিকে 'অবৈধ' বলে ঘোষণা করে আলাস্কার ওপর রাশিয়ার দাবির কথা বলেছে এবং তারা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।"

Image
(Eyamin SAJID)

একই দাবিসহ পোস্টটি ফেসবুকে অন্যত্র এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়। বাংলা ভাষার পাশাপাশি একই দাবিতে পোস্টটি ইংরেজি, থাই এবং স্প্যানিশ ভাষায় শেয়ার করা হয়।

১৮৬৭ সালের ১৮ অক্টোবর ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে আলাস্কার মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করে (আর্কাইভ এখানে)। তবে ভূখণ্ডটি আমেরিকার রাজ্য হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৫৯ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে।

২০২২ সালে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার ব্যাচেস্লাভ ভোলোদিন নিজ দেশের সম্পদ জব্দ করার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে হুশিয়ারি দেন। এসময় তিনি বলেন যে, সম্পদ জব্দ করলে রাশিয়াও আলাস্কার মালিকানা দাবি করতে পারে (আর্কইভ এখানে)।

তবে পুতিন আলাস্কা বিক্রিকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন বলে যে তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে, তা অসত্য।

রাশিয়ার প্রোপার্টি ডিক্রি

গত ১৮ জানুয়ারি 'রাশিয়ান ফেডারেশন, সাবেক রাশিয়ান সাম্রাজ্য, সাবেক ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিক -ইউএসএসআর মালিকানাধীন রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি অনুসন্ধানের প্রক্রিয়ায়" সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাথে সম্পৃক্ত ব্যয়ে অর্থায়নের জন্য একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন।

রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা তাস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ডিক্রির আওতায় 'সম্পত্তির মালিকানা নথিভুক্তকরণ' এবং এই 'সম্পত্তির আইনী সুরক্ষার' জন্য অর্থায়ন করা হবে (আর্কাইভ এখানে)।

১৯১৭ সালে পতনের আগে প্রাক্তন রাশিয়ান সাম্রাজ্য আধুনিক-কালের পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুনিয়ার ভূখন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল (আর্কাইভ এখানে)।

রাশিয়ান সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি হিসাবে মস্কোকে রাজধানী করে ১৯২২ সালে গঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েট ইউনিয়ন (ইউএসএসআর)।

এখনকার ইউক্রেন, এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া এবং জর্জিয়াসহ ১৫টি প্রজাতন্ত্র নিয়ে ইউএসএসআর ছিল বিশ্বের বৃহত্তম দেশ (আর্কাইভ লিংক)। তবে ১৯৯১ সালে ইউএসএসআর-এর পতন হয়।

Image

ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু নাগরিক বাস করছেন, যখন ইউএসএসআর গঠন করা হয়েছিলো কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়নি তারা কিভাবে নিজেদের জীবন গড়তে চায় এমন দাবি করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের আদেশ দেয় পুতিন (আর্কাইভ এখানে)।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহীত ডিক্রিতে আলাস্কার বিষয়ে উল্লেখ না থাকলেও রাশিয়ান মিলিটারি ব্লগার ডিক্রিটি ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, এটি আলাস্কা পুনরুদ্ধারের জন্য পুতিনের একটি সূক্ষ্ম পদক্ষেপ (আর্কাইভ এখানে)।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এই ধারণাকে অবজ্ঞাভরে উপহাস করেছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ভেদান্ত পাটেল গত ২২ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেন: "আমি মার্কিন সরকারের সকলের পক্ষে বলতে চাই যে, অবশ্যই তিনি এটি ফিরে পাচ্ছেন না (আর্কাইভ এখানে)।"

তবে ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্ট্যাডি অব ওয়ার মনে করছে, প্রতিবেশী দেশগুলিতে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য ডিক্রিটি রাশিয়ার অজুহাত হতে পারে (আর্কাইভ এখানে)।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের নিয়মিত মূল্যায়নে ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক গত ১৯ জানুয়ারি বলে: "সোভিয়েত-পরবর্তী এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার লক্ষ্যে সফট পাওয়ারকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের বাইরের দেশগুলিতে তার দাবিকৃত সম্পত্তির 'সুরক্ষার' জন্য ক্রেমলিন ডিক্রিটি ব্যবহার করতে পারে।''

২০১৪ সালে এক প্রশ্নত্তোর পর্বে যখন জানতে চাওয়া হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যটি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, তখন পুতিন মজা করে বলেছিলেন, এটি খুব 'ঠান্ডা' (আর্কাইভ এখানে)।

আলাস্কার গোল্ড

কেনার পর থেকে কয়েক দশক ধরে আলাস্কা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বের বাহিরে ছিলো।

তবে ১৮৯৬ সালে ইউকনে একটি সোনার মজুদ পাওয়ার পর আলাস্কায় মনোনিবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সোনার মজুদ আবিষ্কারের পর পুতিন আলাস্কা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে যে বিভ্রান্তিরকর দাবি করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ ভুল।

ইউএস জিয়োলজিকাল সার্ভের (ইউএসজিএস) তথ্য মতে,আলাস্কা হচ্ছে আমেরিকায় সোনার একটি প্রধান উৎসস্থল। এই রাজ্যে উৎপাদিত তালিকাভুক্ত অন্যান্য খনিজ পদার্থের মধ্যে রূপা থাকলেও, এখানে কোনো হিরার সন্ধ্যান মেলেনি (আর্কাইভ এখানে)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ