ইরাকি ফটোগ্রাফারের ছবিকে ভারতের বিতর্কিত মন্দিরের সাথে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে প্রচার

ইরাকে একটি ফুটবল ম্যাচ হারার পর কান্নারত একজন ফটোগ্রাফারের পুরনো ছবিকে ২০২৪ সালে ভারতে বিতর্কিত মন্দির উদ্বোধনের সাথে অসত্যভাবে সম্পৃক্ত করে নতুন করে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কান্নারত ফটোগ্রাফারের ছবিটি ভারতের উত্তারাঞ্চলিয় শহর অযোধ্যাতে রাম মন্দির উদ্বোধনের পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালে তোলা। অন্যদিকে রাম মন্দিরটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে কয়েক শতাব্দীর প্রাচীন একটি মসজিদ ছিল, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বী উগ্রবাদীরা ভেঙে ফেলেছিল।

গত ২২ জানুয়ারি ফেসবুকে এখানে আপলোড করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়: "শ্রীরাম না চাইলে, জগন্নাথ দেব না চাইলে এই দৃশ্য নির্মাণ হয় না। স্পিচলেস! কাল থেকে সাধারণের সঙ্গে খুলে যাচ্ছে মন্দির!"

পোস্টে চারটি ছবির একটি ফটো কোলাজের তিনটিতে কান্নারত একজন ফটোগ্রাফারকে এবং চতুর্থ ছবিতে হিন্দু দেবতা রামের মুর্তি দেখা যায়।

Image

নরেন্দ্র মোদি যেদিন অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন করেন ঠিক সেদিন পোস্টটি ছড়াতে শুরু করে। মন্দির উদ্বোধনকে মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিজয়ের বাহক এবং ২০২৪ সালে তার পুনঃনির্বাচনের প্রচারের একটি অনানুষ্ঠানিক সূচনা হিসাবে দেখা হয়।

কয়েক শতাব্দীর প্রচীন বাবরি মসজিদের স্থানে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। এর আগে ১৯৯২ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্যদের উস্কে দেওয়া হিন্দু উগ্রবাদীরা মসজিদটি ভেঙে ফেলে।

বাবরি মসজিদ ভাঙার সূত্র ধরে ভারতে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধর্মীয় দাঙ্গা শুরু হয়। এতে ২,০০০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যাদের অধিকাংশই ছিলো মুসলিম। ওই ঘটনা ভারতের অফিসিয়াল ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসের সাথে শাসন ব্যবস্থার যোগসূত্র স্থাপনের জন্য দশকের পর দশক ধরে বিজেপির চালানো ক্যাম্পেইনে রাম মন্দিরের উদ্বোধন একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত।

রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে হাজার হাজার ভক্ত হাতে পতাকা এবং গলায় ঢোল নিয়ে নেচে গেয়ে অযোধ্যার রাজপথে ভিড় করে। ভিড় জমানো ভক্তদের বরণ করেত আকাশ থেকে ফুলের পাপড়ি ছুড়ে সামরিক হেলিকপ্টার।

রাম মন্দিরের সাথে অসত্যভাবে যুক্ত করে কান্নারত ফটোগ্রাফারের ছবিটি একই রকম পোস্টে ফেসবুকের এখানে এখানে শেয়ার করা হয়েছে।

কিন্তু ছবিটি রাম মন্দির উদ্বােধনের অনেক আগের এবং অসত্য প্রেক্ষাপটে ছবিটি বারবার শেয়ার হয়েছে, যে বিষয়ে এএফপি প্রতিবেদন করেছে এখানে, এখানে এখানে

ফুটবল ম্যাচ

গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে এএফসি এশিয়ান কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এখানে ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম প্রকাশিত ছবি পাওয়া যায় (আর্কাইভ এখানে)।

ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়: "আবেগপ্রবণ। কাতারের বিরুদ্ধে রাউন্ড অফ ১৬ ম্যাচে লড়াইয়ের সময় একজন ইরাকি ফটোগ্রাফারের জন্য আবেগপূর্ণ মুহূর্ত।"

২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি ইরাককে ১-০ গোলে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় কাতার (আর্কাইভ এখানে)।

নিচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টের (বামে) এবং এএফসি এশিয়ান কাপের ফেসবুক পেইজে আপলোড করা ছবিটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

একই ফটোগ্রাফারের কান্নারত অন্য দুটি ছবি ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ইরাকের পরাজয় নিয়ে চীনের সংবাদমাধ্যম সিনা স্পোর্টসের প্রতিবেদনে এখানে প্রকাশিত হয় (আর্কাইভ এখানে)।

ছবিগুলোর জন্য অস্পোর্টস ফটো এজেন্সিকে ক্রিডিট দেয়া হয়। ছবিগুলোর চীনা ক্যাপশনের অংশে বলা হয়েছে: "এশিয়ান কাপ ২০১৯। অশ্রুসিক্ত ইরাকি ফটোগ্রাফার মানুষকে খুব আবেগপ্রবণ করে তোলেন। ফুটবল আপনাকে কাঁদাতে পারে! সাবাশ আমাদের ফটোগ্রাফার শুই জি।"

নিচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টের (বামে) এবং সিনা স্পোর্টসে প্রকাশিত ছবিটির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইরাকী সম্প্রচার সংস্থা আল-ইরাকিয়ার একটি প্রতিবেদনে ফটোগ্রাফারকে মোহাম্মদ আল-আজ্জাভি হিসেবে শনাক্ত করা হয় (আর্কাইভ এখানে)।

আল-ইরাকিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-আজ্জাভি জানান যে, তিনি যখন বুঝতে পেরেছেন যে ইরাক খেলায় হেরে যাচ্ছে, তখন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

রাম মন্দির নিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর তথ্য খণ্ডন করে এএফপির করা একাধিক প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ