নির্বাচনী প্রচারে আবেগঘন বক্তব্যের ভিডিও, হেরে গিয়ে কান্নার দৃশ্য নয়

সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনকে ঘিরে অসংখ্য বিভ্রান্তিকর তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে 'প্রহসন" সাব্যস্ত করে বয়কট করার পর এতে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ জয় লাভ করেন। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েক ডজন ফেসবুক পোস্টে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয় যে, জনপ্রিয় লোকশিল্পী ও রাজনীতিবিদ মমতাজ বেগম ভোটে হেরে গিয়ে কেঁদেছেন। তবে বিভ্রান্তিকর পোস্টে কয়েক হাজারবার দেখা ভিডিওটি আসলে ভোটের দুই দিন আগের একটি প্রচার সমাবেশে ধারণ করা, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরের নয়।

গত ৯ জানুয়ারি ফেসবুকে এখানে ভিডিওটি আপলোড করে লেখা হয় :"নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর মমতাজের চোখের পানি সবাইকে কাঁদিয়ে দিয়েছে।"

এক মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওযুক্ত পোস্টটিতে মমতাজ বেগমকে একটি আবেগপ্রবণ বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্নাভেজা চোখ মুছতে দেখা যায়।

Image

শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্য জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয় পেতে ব্যর্থ হন (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

মোট ভোটারের ৪১.৮ শতাংশ কাস্ট হওয়া এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল সংসদে তিন-চতুর্থাংশ আসন পেয়েছে। ভোট প্রদানের এই হার ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটের হারের অর্ধেকের চেয়ে কিছুটা বেশি।

গণগ্রেফতারে নিষ্পেষিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ আরো কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানায়।

নির্বাসিত বিএনপি নেতা তারেক রহমান এই নির্বাচনকে শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করার পরিকল্পিত একটি "প্রতারণা" বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে এই সরকারকে "অবৈধ" বলে  ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান দলটির একজন জেষ্ঠ্য নেতা।

নির্বাচনে হারার পর মমতাজ বেগম কাঁদছেন এমন অভিন্ন দাবি ফেসবুকে এখানে এবং এখানে সহ অন্তত ৪০টি পোস্টে দেখা যায়।

তবে এসব পোস্টে শেয়ার করা ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগের।

নির্বাচনী প্রচারণার ক্লিপ

ভিডিওর কী-ফ্রেম দিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে নির্বাচনের আগে ৫ জানুয়ারি ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওটির একটি দীর্ঘতর ভার্সন পাওয়া যায় (আর্কাইভ এখানে)।

পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়: "ভোট চাইতে গিয়ে কাঁদলেন মমতাজ বেগম।"

বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা ক্লিপটির মতো, দীর্ঘতর ভিডিওটিতে প্রয়াত বাবা-মাকে নিয়ে আলোচনা করার সময় মমতাজকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা যায়।

দীর্ঘতর ভিডিওর ১৭ মিনিটর চার সেকেন্ডে মমতাজকে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে আসন্ন ভোটে সমর্থন চাইতে দেখা যায়। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ভিডিওটি একটি নির্বাচনী প্রচারণার সময় ধারণ করা হয়।

মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় মমতাজ বলেন, "আজ আমি কিন্তু ভোট চাইতাছি না। আমি কিন্তু চাই যে, আপনারা আজকে আর কালকে নিজেদের আত্মীয় স্বজন যে যেখানে আছে তাদের কাছে আমার জন্য ভোট চাইবেন। আমার জন্য ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ করেন। আমি আপনাদের জন্য বাকি পাঁচ বছর কাজ করবো।"

নিচে বিভ্রান্তিকর দাবিতে অনলাইনে শেয়ার করা ভিডিও (বামে) এবং ফেসবুকে শেয়ার করা নির্বাচনী প্রচারণার ভিডিওটির (ডানে) তারিখ হাইলাইট করে তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়ানো পোস্টটির বিষয়ে জানতে চাইলে মমতাক এএফপিকে বলেন: "আমি আমার গ্রামের বাড়ির কাছে একটি সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলাম। যেখানে উপস্থিত শ্রোতাদের বেশিরভাগই ছিল আমার আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতজন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে আমি আমার মৃত বাবা-মার কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।"

এছাড়া কী-ওয়ার্ড সার্চ করে নির্বাচনের পর তিনি জনসন্মুখে কেঁদেছেন এমন কোন সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ছড়ানো বিভিন্ন অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য খণ্ডন করে এএফপির করা আরো প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ