লন্ডনে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতার ওপর হামলার অসত্য দাবি সহকারে ভিডিও প্রচার

যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা তারেক রহমানের হুইল চেয়ারে বসারত একটি পুরনো ভিডিওকে নতুন করে অনলাইনে ছড়িয়ে তিনি সম্প্রতি লন্ডনে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন এমন অসত্য করা করা হচ্ছে। কিন্তু যে সাংবাদিক ভিডিওটি ধারণ করেছেন তিনি এএফপিকে জানিয়েছেন, তারেক রহমান ২০০৮ সালে যখন চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তখন এটি ধারণ করা হয়েছিলো। তারেক রহমানের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র একজন মূখপাত্র জানিয়েছেন, তার ওপর (তারেক) সম্প্রতি এই ধরনের কোনো আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এখানে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়।

পোস্টের ক্যাপশন এবং ভিডিওর উপর জুড়ে দেয়া ভাষ্যে বলা হয়: "লন্ডনে গণধোলাই খেয়ে হসপিটালে তারেক রহমান।"

Image
( Md EYAMIN)

২০০৮ সালে বাংলাদেশের একটি আদালত তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ সফরের অনুমতি দেয়ার পর থেকে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে বসবাস করেছেন। এর আগে রিমান্ড নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে-- আদালতের কাছে এমন বক্তব্য দেয়ার পর আদালত তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয় (আর্কাইভ লিংক)।

তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করার পর আর বাংলাদেশে ফেরেননি (আর্কাইভ লিংক)।

২০২৩ সালে দুর্নীতির অভিযোগে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে তাকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার একটি রাজনৈতিক সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছিলো। ২০০৪ সালে ওই হামলার ঘটনার সময় তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অসত্য দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।

এএফপির প্রতিবেদন মতে, এই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জয় অনেকটা নিশ্চিত। তবে বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলো এই নির্বাচনকে "প্রহসনমূলক" ভোট বলে নিন্দা জানিয়েছে।

একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে এখানে এবং এখানে ছড়ানো হয়েছে।

তবে দাবিটি অসত্য।

লন্ডনে তারেক রহমান

বিএনপির প্রেস বিভাগের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, লন্ডনে তারেক রহমানের উপর কোন ধরনের শারীরিক লাঞ্ছনার খবর তাদের দলের কাছে আসেনি।

গত ২১ ডিসেম্বর তিনি এএফপিকে বলেন, "যদি এমন কিছু হতো, তাহলে অবশ্যই আমরা তা জানতাম।"

ভিডিওর কীফ্রেইম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা চ্যানেল এস -এ কর্মরত সাংবাদিক তানভীর আহমেদের ইউটিউব চ্যানেলে একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে (আর্কাইভ লিংক)।

২০০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভিডিওটি আপলোড করা হয়। এর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে "লন্ডনের গ্যাটউইক বিমান বন্দরে আহত তারেক রহমান।"

নিচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং ২০০৮ সালের ইউটিউব ভিডিওর (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

তানভীর আহমেদ এএফপিকে জানান, ২০০৮ সালে তারেক রহমান বাংলাদেশ থেকে গ্যাটউইক বিমান বন্দরে পৌঁছালে তিনি ভিডিওটি ধারণ করেন।

তিনি বলেন, "২০০৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লন্ডনের গ্যাটউইক বিমান বন্দরে আমি ভিডিওটি ধারণ করি। আমি তখন বাংলাদেশি সম্প্রচার টেলিভিশন চ্যানেল আই এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতাম।"

২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনলাইন সংবাদ সংস্থা ফোরভিশনবাংলায় তারেক রহমানের লন্ডন পৌঁছানোর বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহত ভিডিওটিতে একই দৃশ্য দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির বর্ণনার একটি অংশে বলা হয়েছে "ভবিষ্যতে আর কোন রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ার বিষয়ে লিখিত মুচেলেকা দেয়ার পর সেনাবাহিনী সমর্থিত ১/১১ এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্তায় বিএনপি নেতা তারেক রহমান লন্ডনে এসেছেন।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ