ইরাকে তোলা পুরনো ভিডিওকে অসত্যভাবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বলে প্রচার

ইসরায়েলের আকাশ ও স্থল অভিযানে গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, হামলায় নিহত হয়েছেন কয়েক হাজার বেসামরিক লোক। তবে মায়ের কবরে কান্নারত এক মেয়ে শিশুর একটি ভিডিও সামাজিম মাধ্যমে ছড়িয়ে তাকে ফিলিস্তিনি শিশু বলে দাবি করা হলেও চলমান সংঘাতের সাথে ভিডিওটি সম্পৃক্ত নয়। ২০২০ সাল থেকে অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটি ইরাকে ধারণ করা, যা অক্টোবর ২০২৩ -এ ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর আগের।

গত ১৬ অক্টোবর ফেসবুকে এখানে আপলোড করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়: "আছে কি কোনো মানবাধিকার সংগঠন যে মা হারা বাচ্চাকে স্বাস্তনা দিবে?"

এতে আরো বলা হয়: "আছে কি কোনো আরব শাসক যে অসহায় শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে? আছে কি কোনো মানবতাবাদী সংস্থা যে মেয়েটির পক্ষে দু কলম লিখবে?"

'PalestinianLiveMatter' এমন হ্যাশট্যাগসহ ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি বাচ্চা মেয়ে মাটিতে কুঁকড়ে বসে কাঁদছে।

ভিডিওর ফ্রেমের ভেতরে লেখা হয়, "হারিয়ে গেছে এই মেয়েটা সব।"

Image

ফেসবুকের এখানে এবং এখানে আপলোড করা এই ভিডিওতে কয়েক'শ ভিউ হতে দেখা যায়।

গত ৭ অক্টোবর হামাস মিলিট্যান্টরা ইসরায়েল সীমানায় ঢুকে নজিরবিহীন আক্রমণ চালালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। হামাসের ওই হামায় বেসামরিক লোকসহ ১,২০০ নিহত হন এবং আরও ২৪০জনকে জিম্মি করা হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ।

জবাবে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় আকাশ ও স্থল পথে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলের হামলায় ওই অঞ্চলটি ধ্বংস্তুপে পরিণত হয় এবং বেসামরিক লোকসহ প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয় বলে জানিয়েছে হামাস কর্মকর্তারা।

২৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে সাত সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতির সময় কয়েক ডজন ইসরায়েলিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস, বিনিময়ে ১০০ কারাবন্দী ফিলিস্তিনিকে হস্তান্তর করেছে ইসরায়েল।

ইরাকি শিশু কন্যা

গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চে ভিডিওটির একটি দীর্ঘ ভার্সন পাওয়া যায়, যা ইসরায়েল-হামাস চলমান যুদ্ধের কয়েকবছর আগে ২০২০ সালে আপলোড করা হয়।

১২ অক্টোবর ২০২০ সালে ইউটিউব ভিডিওর আরবি ভাষার শিরোনামে বলা হয়:"শিশু ফাতিমা সালাম শালান আল-মুসাভির মা মারা গেছেন। সে নিজেকে কীভাবে সামলাচ্ছে দেখুন। বিধাতা মহান (আর্কাইভ লিংক)।"

শোকাহত মেয়ে শিশুটিকে আরবিতে 'মা মা" বলে আহাজারি করতে শোনা যায়।

নিচে অসত্য দাবিতে শেয়ার করা ভিডিও(বামে) এবং ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ভিডিওর (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

ইউটিউব চ্যানেলটির অন্য একটি ভিডিওতে একই মেয়েটিকে একজন ব্যক্তি এবং বাচ্চার সাথে একটি কবরে ফুলের মালা দিতে দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

ভিডিওটির আরবি ভাষার শিরোনামে বলা হয়: "মৃত্যুর তিনদিন পর মায়ের কবর জিয়ারত করছে শিশু ফাতিমা সালাম শালান।"

ক্যামেরার পিছনে এক ব্যক্তিকে আরবি ভাষায় বলতে শোনা যায় যে, "ফাতিমা তার মায়ের কবরের কাছে যাচ্ছে।"

ভিডিওর বিবরণ অনুযায়ী, মেয়েটির মা করোনা আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ইরাকের নাজাফ প্রদেশের নাজাফ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

উভয় ক্লিপের ভিজ্যুয়াল বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এএফপি নিশ্চিত হয়েছে যে, দীর্ঘ ভার্সনের ইউটিউব ভিডিও এবং অসত্য দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওটি একই স্থানে ধারণ করা হয়েছে।

নীচে অসত্য দাবিতে ছড়ানো পোস্টের ভিডিওর (বামে) সাথে ইউটিউবের দীর্ঘ ভিডিওর(ডানে) যেসব মিল রয়েছে এএফপি সেসব হাইলাইট করে তুলনামূলক স্ক্রিনশট তুলে ধরছে:

Image

এছাড়া ইউটিউব ভিডিওর ৪৪-সেকেন্ডের চিহ্নে ইরাকি পতাকাও দৃশ্যমান।

Image

বৈরুতে কর্মরত এএফপির একজন সাংবাদিক ভিডিওতে দেখানো কবরস্থানটিকে ইরাকের নাজাফ শহরের ওয়াদি আল সালাম কবরস্থান হিসেবে সনাক্ত করেছেন, যা গুগল ম্যাপে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পাশাপাশি, ইউটিউবের দীর্ঘ ভার্সনের ভিডিওতে যেসব গম্বুজ দেখা গেছে গেটি ইমেজস-এর তোলা ওয়াদি আল-সালাম কবরস্থানের একটি ছবিতে একই ধরনের গম্বুজ দৃশ্যমান।

Image

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে ছড়ানো অসত্য তথ্য খণ্ডন করে এএফপির ধারাবাহিক প্রতিবেদন দেখুন এখানে

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ