এআই নির্মিত ছবিটি ২০২৩ সালের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের আগে থেকে অনলাইনে আছে
- প্রকাশিত 30 নভেম্বর 2023, 05:40
- 3 এক্স মিনিটে পড়ুন
- লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
কপিরাইট © এএফপি ২০১৭-২০২4। এই কন্টেন্টের যেকোন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
গত ১৯ অক্টোবর ফেসবুকে এখানে আপলোড করা ছবিটিতে ইট-পাথরের স্তুপের নিচে আটকে পড়া একটি শিশুকে দেখা যাচ্ছে। আপলোডের পর থেকে ছবিটি ৪,০০০ বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে।
ছবিটির বাংলা ভাষার ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "মনে করেন এটি আপনার শিশু, তখন আপনার কাছে কেমন লাগবে..! জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ।"
৭ অক্টোবর হামাস মিলিট্যান্টরা ইসরায়েলে ঢুকে আক্রমণ করার পর থেকে ছবিটি ছড়ানো হয়। ওই হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায় হামাস। যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোক বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
পাল্টা জবাবে হামাসকে ধ্বংস করার জন্য সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। গাজার হামাস সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় কয়েক হাজার শিশুসহ প্রায় ১৫,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
২৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে সাত সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে কয়েক ডজন ইসরায়েলিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস, বিনিময়ে ১০০ কারাবন্দী ফিলিস্তিনিকে হস্তান্তর করেছে ইসরায়েল।
একই দাবিতে ছবিটি ফেসবুকে এখানে এবং এখানে শেয়ার করা হয়েছে।
কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্য দেখে বুঝা যায় তারা ছবিটিকে বাস্তব বলে বিশ্বাস করেছেন।
একজন মন্তব্যে লিখেছেন, "ফিলিস্তিনের প্রতিটি রক্তাক্ত শিশুকে নিজের সন্তান মনে হয়। এটা আমার হৃদয়ে আঘাত করে। কিন্তু কিছুই করতে পারছি না।"
আরেকজন লিখেছেন, "এই ছবি দেখে আমার অন্তর ছিড়ে যাচ্ছে। বাচ্ছাটাকে কোলে তুলে নিতে সেখানে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। আল্লাহ তাদের প্রতি সহায় হউক।"
তবে এএফপি অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ছবিটি হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা এবং ইসরায়েলের পাল্টা বোমাবর্ষণের কয়েক মাস আগে থেকেই অনলাইনে আছে।
যুদ্ধের পূর্বের ছবি
টিনআই-এ রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, গাজা যুদ্ধ শুরুর আট মাস আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ছবিটি অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে।
৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ৫০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর ত্রাণ সম্পর্কিত একটি পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় একজন এক্স-, পূর্বে যা টুইটার হিসেবে পরিচিত ছিলো, ব্যবহারকারী ৮ ফেব্রুয়ারি ছবিটি শেয়ার করেন।
আরো রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, একই ছবি ফেব্রুয়ারিতে লিঙ্কডইনেও শেয়ার করা হয়েছিল।
নীচে অসত্য দাবিতে শেয়ার করা ছবি (বামে) এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে প্রচারিত ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:
একজন ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ এএফপিকে জানিয়েছেন, ছবিটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার "জোরালো সম্ভাবনা" রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিকেশনস এর সিনিয়র লেকচারার ড. টিজে থমসন এএফপিকে জানান, শিশুর বাম হাতের আঙ্গুলসহ কপাল এবং চিবুকের ভাজে অসামঞ্জস্য আছে।
ছবিটির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিশুটির অনেকগুলি আঙ্গুল রয়েছে যেগুলো বিকৃত।
জেনারেটিভ এআই-এর অগ্রগতি সত্ত্বেও, এআই-দিয়ে তৈরি কনটেন্ট-এ এখনও ত্রুটি দেখা যায়। যেসময় ছবিটি অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়, তখন পর্যন্ত এআই দিয়ে বাস্তবসম্মত হাত তৈরি করা কঠিন ছিল, যে বিষয়ে এএফপি ইতোমধ্যে রিপোর্ট করেছে।
গত ২৭ নভেম্বর (আর্কাইভ লিংক) থমসন বলেন, "সব মিলিয়ে বুঝা যাচ্ছে যে, ছবিটি এআই-দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা বেশি।"
অসত্য পোস্টের ছবিতে থমসন যেসব অসামঞ্জস্য তুলে ধরেছেন সেগুলো হাইলাইট করে নিচে একটি স্ক্রিনশট দেয়া হলো:
এএফপির সহযোগী সংস্থা ইউরোপীয়ান ভেরিফিকেশন প্রজেক্ট ভেরাই ডট ইউ-ও ছবিটিকে এআই দিয়ে তৈরি বলে চিহ্নিত করেছে।
ফেব্রুয়ারীতে এক্স-এ যে ব্যবহারকারী ছবিটি শেয়ার করেছেন, এএফপি তার কাছে এর উৎস জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলেও তিনি উত্তর দেন নি।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে ছড়ানো অসত্য তথ্য খণ্ডন করে এএফপির ধারাবাহিক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?
আমাদের সাথে যোগাযোগ