ইরাকের ধর্মীয় সমাবেশের ভিডিও ক্লিপকে অসত্যভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাবেশ বলে প্রচার 

বাংলাদেশ যখন ২০২৪ সালের প্রথম দিকে দেশটির পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখন বিশাল জনসমাবেশের একটি ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে সেটিকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে গত ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত সমাবেশ হিসেবে অসত্য দাবিতে পোস্ট করা হচ্ছে। তবে, প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি ২৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে ইরাকে অনুষ্ঠিত একটি ধর্মী সমাবেশের, যা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের ওই সমাবেশের এক মাস আগেই প্রকাশিত হয়। ভিডিও ক্লিপটির মূল অডিও পরিবর্তন করে বাংলাদেশী রাজনৈতিক স্লোগান যুক্ত করা হয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর ফেসবুকের একটি পোস্টে শেয়ার করা ভিডিওটি ৯০০ বারের বেশি দেখা হয়েছে।

পোস্টটির বাংলা ক্যাপশনে বলা হয়, "মুজিব আমার চেতনা মুজিব আমার বিশ্বাস, কে বলেরে মুজিব নাই মুজিব সারা বাংলায়"। এখানে মুজিব বলতে বাংলাদেশের স্থপতি এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে বোঝানো হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

১৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে পোস্টে দেখা যায়, সমাবেশে যোগ দেয়া জনতা একই স্লোগান দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ গত ৩১ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে একটি সমাবেশ আয়োজন করে, যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ লোক যোগ দিয়েছিলো বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগ। ওই সামাবেশের পরপরই এই ভিডিও ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়ে (আর্কাইভ লিংক)।

ইউএনবি সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা সমাবেশে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন (আর্কাইভ লিংক)।

Image

একই ভিডিও ক্লিপ বাংলাদেশের সাথে সম্পৃক্ত করে অসত্য দাবিতে ফেসবুকের এখানে এখানে, এবং ইউটিইউবে এখানে শেয়ার করা হয়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে অজ্ঞাত গোষ্ঠির দ্বারা ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে।

এএফপির এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশি এবং বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হওয়া নিরেপক্ষ বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন নীতিমালার প্রশংসা করে নিবন্ধ লিখে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে এসব লেখকদের কারো অস্তিত্ব নেই, কেউ ভুয়া ছবি এবং ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছেন তাদের লেখায়।

দীর্ঘ সময় ধরে মানবাধিকার সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তিগুলো হাসিনা সরকার কর্তৃক বিরোধী মত এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি বাংলাদেশে তোলা হয়নি।

ইরাকের ধর্মীয় মিছিল

সার্চ ইঞ্জিন গুগলের রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় যে, প্রকৃত ভিডিওটি এক মাস আগে ৩০ জুলাই ইরাক থেকে ইউটিইউব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনিস্টাগ্রাম পোস্টে ভিন্ন অডিও ব্যকগ্রাউন্ডসহ প্রকাশ করা হয়েছে (আর্কাইভ এখানে এখানে)।

তবে, ভিডিওটি ঠিক কখন ধারণ করা হয়েছিলো সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি এএফপি।

ওইসব পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয় যে, নবী মুহাম্মদের নাতি হুসাইন ইবনে আলির শাহাদাত বার্ষিকী তথা আশুরা দিবস উদর্যাপন উপলক্ষ্যে এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর মুসলমানরা আশুরার দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে আর শিয়া ধর্মাবলম্বীরা দিনটিকে শোকের দিন হিসেবে মাতমের মাধ্যমে পালন করে থাকে (আর্কাইভ লিংক)।

নীচে বিভ্রান্তিকর পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং ইউটিইউব শর্টের ভিডিওর (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্ট (বামে) এবং ইউটিউব শর্ট (ডানে) এর তুলনামূলক চিত্র

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোর গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সমাবেশের বেশিরভাগ জনতা কালো পোশাক পরিহিত, যেটা আশুরার শোকের ঐতিহ্যগত পোশাক। একই সঙ্গে সমাবেশে যোগ দেয়া জনতাকে হুসাইনের চেহারা সংবলিত ব্যানার প্রদর্শন করতে দেখা যায়।

বাংলাদেশী রাজনৈতিক স্লোগানের পরিবর্তে জনতাকে 'হযরত আব্বাসের অনুগত' শীর্ষক স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্লোগানের এ বাক্যাংশটি হুসাইনের ভাইদের বোঝাতে ব্যবহার হয়।

এএফপি ভিডিও ক্লিপটির দৃশ্যের ভৌগলিক অবস্থান ইরাকের রাজধানী বাগদাদের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত সামাওয়াহ শহরে খুঁজে পায়।

ভিডিওতে দেখানো নদী এবং সেতুগুলি গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ইমেজে এখানে দৃশ্যমান।

নীচে এএফপি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্যসহ বিভ্রান্তিকর পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ইমেজে (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image
বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং স্যাটেলাইট ইমেজারির (ডানে) তুলনামূলক চিত্র:

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ