করসল গাছের পাতার রস সেবনে ক্যান্সার সেরে ওঠার অসত্য দাবি ফেসবুকে

  • প্রকাশিত 28 আগস্ট 2023, 17:03
  • আপডেট করা হয়েছে 28 আগস্ট 2023, 17:06
  • 2 এক্স মিনিটে পড়ুন
  • লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, করসল নামক একটি ফল গাছের পাতার রস ক্যান্সার রোগ ভালো করতে পারে। কিন্তু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এএফপিকে বলেছেন ক্যান্সার চিকিৎসায় করসল ফল বা সেই গাছের পাতার রস কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে এমন কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

গত ৩ জুলাই ফেসবুকে এখানে এক ব্যক্তি করসল ফলের ছবিসহ একটি ব্যানার পোস্ট করেছে যেই ব্যানারে লেখা রয়েছে, “এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে ক্যান্সার প্রতিরোধী ফল ‘টক আতা”।

ক্যাপশনে তিনি আরও লিখেছেন, “করসল আতা/ টক আতা গাছটি কোথায় পাবো কারো জানাথাকলে দয়া করে জানাবেন আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য এই গাছের পাতা প্রয়োজন।”

Image

একই রকম দাবি সহকারে আরও পোস্ট দেখুন এখানে এখানে

বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমেও (এখানে এখানে) করসল ফল এবং এটির পাতাকে ‘ক্যান্সার প্রতিরোধী’ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।

যেমন গত ২ জুলাই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রচারিত চার মিনিট ১২ সেকেন্ডের ভিডিও প্রতিবেদনটি প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ লোক দেখেছেন।

প্রতিবেদনে একজন রোগীর বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে যিনি বলেছেন, “১০টা ক্যামো দিলে যে উপকারটা পাওয়া যায় সেটা একটা করসল ফল খেলেই পাওয়া যায়।”

তবে একই প্রতিবেদনে ডাক্তার মনোয়ার হোসেন নামে একজন ক্যান্সার চিকিৎসকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে যিনি, জানিয়েছেন এই দাবির পক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা এএফপিকেও একই কথা বলেছেন। এখন পর্যন্ত কোন গবেষণাই এই দাবিগুলিকে সমর্থন করে না।

পণ্যের প্রচারণার কৌশল

ফিলিপাইনের পাঙ্গাসিনান প্রদেশের ডাগুপান ডক্টরস ভিলাফ্লোর মেমোরিয়াল হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অ্যান মেরেডিথ গার্সিয়া-ত্রিনিদাদ বলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা হিসাবে এই ধরনের প্রচারণা একটি "বিপণন চক্রান্ত" বা বাণ্যিজিক কৌশল (আর্কাইভ লিংক)।

এএফপিকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, "করসল বা সাওয়ারসপ ফল কোনভাবেই ক্যান্সারের চিকিৎসা বা প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসাবিদ্যায় অনুমোদিত নয়।"

করসল বা সাওয়ারসপ দিয়ে তৈরি "পণ্যের গঠন বা ব্র্যান্ড যাই হোক না কেন, এই ধরনের পণ্যের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ," তিনি আরো যোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, “শুধু প্রি-ক্লিনিকাল কিছু গবেষণায় করসল ফলে ক্যান্সার বিরুদ্ধে লড়ার মতো কিছু উপাদান দেখা গেছে। কিন্তু তার উপর ভিত্তি করে মানুষের শরীরে এটির আদৌ কোন উপকার আছে কিনা তা বলার সুযোগ নেই।”

কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় করসল ফলে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো কিছু বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আরেক গবেষক এবং মিডান'স ডিজিটাল হেলথ ল্যাবের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেনা শেরম্যান। (আর্কাইভ লিংক)।

১৩ জুলাই এএফপিকে তিনি বলেন, "এই সব যা বলা হচ্ছে, এই দাবিগুলোকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করার জন্য আমাদের কাছে মানুষের উপর পরিচালিত গবেষণার পর্যাপ্ত তথ্য নেই।"

"যেকোনো নির্যাস, জুস বা করসল থেকে তৈরি ওয়াইনের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য।"

ম্যানিলার ইউনিভার্সিটি অফ সান্টো টমাস হাসপাতালের অনকোলজিস্ট ডা. ওয়ারেন ব্যাকোরো এএফপিকে বলেছেন, যেসব রোগী কথিত "ক্যান্সার-বিরোধী বৈশিষ্ট্য" সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে চান, তাদেরকে প্রথমে নিজ নিজ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত কারণ এটি "চিকিৎসার কার্যকারিতায় ব্যঘাত ঘটাতে পারে কিংবা পার্শপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি তৈরি করতে পারে।" (আর্কাইভ লিংক)।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ