এটি একটি শর্ট ফিল্মের দৃশ্য, নির্বাসিত বাংলাদেশি ব্লগারকে মারধরের নয়

অনলাইনে ধর্মীয় অবমাননাকর কন্টেন্ট পোস্ট করার অভিযোগে এক বাংলাদেশি ব্লগার আসাদ নুর সমালোচিত হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে যেখানে অসত্যভাবে দাবি করা হয়েছে সেটি নুরের ওপর হামলার দৃশ্য। কিন্তু বাস্তবে ভিডিওটি একটি অনলাইন শর্ট ফিল্মের অংশ। সেই ফিল্মের পরিচালক এএফপিকে জানিয়েছে ভিডিওতে জনতার ধাওয়ার শিকার ব্যক্তিটির চরিত্রে তিনি নিজে অভিনয় করেছেন।

গত ৭ আগস্ট ফেসবুকে ভিডিওটি এখানে পোস্ট করে ক্যাপশন দেয়া হয়েছে, "কুলাঙ্গার আসাদ নূরের উপর কিছু একটা পড়তেছে! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না!"

১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে-- যেটি ৫ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে-- দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি রাস্তায় দৌড়াচ্ছেন এবং তাকে পেছন থেকে কয়েকজন ব্যক্তি আঘাত করছেন আর বলছেন, "ধর ধর, ওরে মার"।

Image

আসাদ নুর একজন বাংলাদেশি ব্লগার যিনি ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুইবার গ্রেফতার হওয়ার পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিরাপত্তা চেয়ে বিদেশে পাড়ি জমান বলে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

তখন ইসলাম ধর্ম এবং নবী মুহাম্মদের অবমাননা করার অভিযোগে নুর গ্রেফতার করা হয়েছিল; বিচারে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে দেশটির কঠোর ইন্টারনেট বিষয়ক আইনে ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারতো।

নির্বাসনে গিয়েও তিনি নিয়মিত ব্লগ লেখেন এবং অনলাইনে তার সোশাল মিডিয়া পেইজে ভিডিও কন্টেন্ট প্রকাশ করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিনি সাম্প্রতিক সময়ে আবারও নবী মুহাম্মদের অবমাননা করেছেন এমন অভিযোগে ইসলামপন্থী বিভিন্ন গ্রুপের দ্বারা নিন্দিত হয়েছেন (আর্কাইভ লিংক)

একই ভিডিও একই রকম দাবি সহকারে ফেসবুকে এখানে এখানে পোস্ট করা হয়েছে।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটিতে আসাদ নুরের ওপর হামলার নয়, বরং একটি শর্ট ফিল্মের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

গুগলে কীওয়ার্ড এবং রিভার্স ইমেজ সার্চ করে একই ভিডিও Roshovonggo নামের এই ফেসবুক পেইজে পাওয়া গেছে যা গত ৩০ জুলাই আপলোড করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক এখানে এখানে)।

সেটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, "গণধোলাই"।

নীচে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিও (বামে) এবং Roshovonggo নামক পেইজের ভিডিওর (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:

Image

এই ভিডিওটি মূলত 'পাতি নেতা' নামক একটি অনলাইন শর্ট ফিল্মের 'টিজার' হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। শর্ট ফিল্মটি পরে ৮ আগস্ট ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছে (আর্কাইভ লিংক)।

শর্ট ফিল্মের ক্যাপশনে তাদের আগের টিজারটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, "এই ভিডিওটা থেকে একটা দৃশ্য নিয়ে আমরা আমাদের Tiktok এবং আমাদের ফেইসবুক পেজে পোস্ট করেছিলাম। সবাই এখন থেকে নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট করছে এবং সবাই আমাদের ভাবছে আমরা Asad Noor's Vlog। আপনারা সবাই ভুল ভাবছেন এবং আমাদের কমেন্ট এবং ইনবক্স অনেক আজেবাজে গালি দিচ্ছেন । সবার কাছে অনুরোধ থাকলো আমাদের কেউ গালি দিয়েন না। আসাদ নূরের এইটা হওয়ার ১ সপ্তাহ আগে আমরা এই ভিডিও পোস্ট করেছিলাম। আমরা আসাদ নূর এর জন্য এই ভিডিওটি বানাই নি। আপনারা সবাই আগে একটু যাচাই করে বিচার করুন।"

Roshovonggo পেইজটির মালিক হচ্ছেন আকাশ চৌধুরী লেলিন, যিনি একজন ফটোগ্রাফার এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। তার পেইজে নিয়মিত নানা ধরনের রম্য কন্টেন্ট পোস্ট করা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

আকাশ এএফপিকে জানিয়েছে যে, ভিডিওতে যাকে দৌড়ে মারধর করা হচ্ছে সেই ব্যক্তি তিনি নিজেই।

"দৌড়ানো লোকটি আসাদ নুর নয়, এটা আমি। আমি স্থানীয় একজন পাতি নেতার চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি", গত ১৪ আগস্ট তিনি একথা বলেন।

দৃশ্যটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহের পাগলা কানাই সড়কে রেকর্ড করা হয় (আর্কাইভ লিংক)।

নীচে ফিল্মের দৃশ্য (বামে) এবং ওই রাস্তার গুগল স্ট্রিট ভিউয়ের (ডানে) তুলনামূলক চিত্র তুলে দেয়া হল:

Image

আকাশ তার এক ফেসবুক পোস্টেও গত ৭ আগস্ট জানান যে, তাদের টিজারটি অসত্য দাবিসহ ফেসবুকে অনেকে শেয়ার করছেন (আর্কাইভ লিংক)।

"আসাদ নূরের মতন বড় চুল থাকার কারণে সবাই আমার ভিডিওটি ভাবছে আসাদ নূরের ভিডিও।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ