এটি মিশরে কাঠের মূর্তি ডেলিভারির দৃশ্য, ভারতে নারীর লাশ পরিবহনের নয়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি ২০২৩ সালের জুন মাসে ভারতের রাজস্থানে এক নারীকে হত্যার পর তার লাশ মোটারবাইকের পেছনে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন খুনি। কিন্তু ছবিটি মূলত পোশাক প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত একটি মূর্তি বা কাঠের পুতুল ডেলিভারির, যা চলতি বছরের মে মাসে মিশরের ঘটনা। বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়ানোর আগে ছবিটি মিশরের বিভিন্ন সংবাদেও প্রাকাশিত হয়েছে, যাতে বলা হয় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটি তদন্ত করে জেনেছেন যে, মূর্তিটি রাজধানী কায়রোর একটি স্থানে নেয়ার সময় ছবিটি তোলা।

গত ৩ জুন ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ছবিতে মোটরবাইকের পেছনে বেধে বয়ে নেয়া কাপড়ে মোড়ানো একমৃত ব্যক্তির পায়ের একটি অংশ বেরিয়ে থাকতে দেখা যায়।

বাংলা ভাষায় লেখা পোস্টিতে বলা হয়: "কি বিভৎস!! সংবাদে জানাচ্ছে মেয়েটির নাম বিনীতা। বাড়ি রাজস্থান। মেয়েটি এক ফল বিক্রেতার সাথে প্রেম করে বাইশ দিন ধরে ঘর ছাড়ে। বাইশ দিন পরে তার প্রেমিক তাকে খুন করে এভাবেই বস্তাবন্দী করে মোটর বাইকে করে নিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাক্রমে মেয়েটির পা বেরিয়ে যায়। একজন গাড়ি চালক সেটা দেখে ছবি তুলে পুলিশকে খবর দেয়। কিছুকাল যাবত প্রায় প্রতিদিনই ভারত বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও এমন প্রেমিকের হাতে খুনের খবর মিলছে। যা খুবই মর্মান্তিক এবং হতাশাজনক। এগুলো সাধারণ হৃদয়ঘটিত ব্যাপার বলে মনে করা কঠিন। এর পিছনে কোন গোষ্ঠীর বিশেষ কারণ আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। একই সাথে তরুণী এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস করা প্রয়োজন বলেই মনে করি।"

Image
( Qadaruddin SHISHIR)

একই দাবিতে ছবিটি আরো কয়েকটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে বাংলায় এখানে এখানে এবং হিন্দী ভাষায় এখানে এক ভারতীয় ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, অনেক ব্যবহারকারী ছবিতে একটি লাশ বহন করে নেয়ার তথ্য বিশ্বাস করেছেন, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী অপরাধীর নামও জানতে চেয়েছেন।

"ভাবতেও পারি না মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে," এমন মন্তব্য করেছে অন্য একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী।

কাঠের মূর্তি ডেলিভারি

গুগলে কীওয়ার্ড এবং রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর পর ছবিটির একটি ভার্সন মিশরীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকাশিত হয়, যেখানে প্রশ্ন করা হয় ওই দেশে এইভাবে আসলেই কোন মানুষের লাশ পরিবহন করা হয়েছে কিনা।

আরবি ভাষায় মিশরের সংবাদমাধ্যম কায়রো 24 প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছবির সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রকাশ করেছে (আর্কাইভ লিংক)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, "তদন্ত করে দেখা যায় যে, এটি একটি কাঠের পুতুলের ছবি যা পোশাক প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এক পাকড়ের দোকানী তার দোকান থাকে পুতুলটি মে মাসের ২৭ তারিখে কায়রোর মোকাত্তাম এলাকার পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি পরিবহন কোম্পানিকে অনুরোধ জানায়।"

নীচে বিভ্রান্তিকর পোস্টের ছবির (বামে) ও কায়রো ২৪ এ প্রকাশিত ছবির (ডানে) তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হলো:

Image

মিশরের রাষ্ট্র পরিচালিত আল-আহরাম সংবাদপত্রও এই ধরণের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এখানে (আর্কাইভ লিংক)।

ছবিটি আরেও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মোটরসাইকেলের লাইসেন্স প্লেটে আরবি লিপি ব্যবহার করা হয়েছে।

লাইসেন্স প্লেট নিয়ে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান 'লাইসেন্স প্লেটস অব দ্যা ওয়ার্ল্ড' এর তথ্য মতে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটের সাথে মিশরের লাইসেন্স প্লেটের মিল রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের লাইসেন্স প্লেটে রোমান লিপি ব্যবহার করা হয় (আর্কাইভ লিংক) ।

Image

ছবিটি নিয়ে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের পুলিশও পোস্ট করেছে।

হিন্দি ভাষায় "ফেইক নিউজ এলার্ট" নামে টুইটার পোস্টে পুলিশ জানিয়েছে, ছবিতে মিশরে একটি কাঠের পুতুল পরিবহনের দৃশ্য দেখা যায় (আর্কাইভ লিংক)।

হিন্দি ভাষার ওই পোস্টে রাজস্থান পুলিশ সতর্ক করেন বলেন, "যারা এই ধরনের গুজব ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

Image

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ