ডেঙ্গু মশার বিরুদ্ধে লবঙ্গ ও লেবুর কার্যকারিতার কথা ভিত্তিহীন বললেন বিশেষজ্ঞরা

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কিছু পোস্টে লেবুর সাথে লবঙ্গ গেথে রাখলে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব থেকে বাঁচা যাবে এরকম একটি অসত্য দাবি করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পতঙ্গবিশারদরা এএফপিকে বলছেন ডেঙ্গুর প্রতিরোধক হিসেবে এই পদ্ধতির কথা ছড়ানো উচিত নয়।

গত ১৮ জুন একটি ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, "কয়েল ছাড়া ঘর মশা মুক্ত রাখার দুর্দান্ত উপায়, যা অনেকেই জানেন না। স্প্রে, মশার কয়েল ছাড়াও মশা তাড়ানো যায়। ঘরোয় উপায়ে মশা তাড়ানোয় কোনো ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আসুন মশা তাড়ানোর ঘরোয় উপায় জেনে নেই।”

আরও লেখা হয়েছে, “দ্বিতীয় উপায় ------ লেবু ও লবঙ্গ: একটি লেবু দুই টুকরা করে কেটে নিন। এর পর কাটা লেবুর ভেতরের অংশে বেশ কয়েকটা করে লবঙ্গ গেঁথে দিন।”

Image

ডেঙ্গু রোগের প্রধান বাহক এডিস মশা যা মূলত স্থির পানিতে বংশবৃদ্ধি লাভ করে। ডেঙ্গুর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথা ব্যথা, জোড়ার ব্যথা যা থেকে রক্তক্ষরণ, অঙ্গের অকার্যকারিতা, এবং মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটতে পারে (আর্কাইভ লিংক)।

গত কয়েক বছরের মধ্যে এবছর ডেঙ্গু বাংলাদেশে ভয়ানক আকার ধারণ করছে। ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ২৮১ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলেও এবছর প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে তুলনামূলক বেশি।

দাবিটি ফেসবুকে বাংলায় এখানে এখানে এবং সিংহলি ভাষায় এখানে শেয়ার করা হয়।

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পতঙ্গবিশারদরা এএফপিকে বলেছেন, ডেঙ্গুর প্রতিরোধক হিসেবে লেবু ও লবঙ্গের মিশ্রণকে বিবেচনা করা উচিত নয়।

পরিচ্ছন্ন পরিবেশ

শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালেয়ের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের ড. লাহিরু কোডিতোয়াক্কু গত ১৫ জুন এএফপিকে বলেন, দাবিটি মারাত্নক বিভ্রান্তিকর এবং মশা তাড়াতে তিনি এ ধরণের ঘরোয়া টোটকার উপর ভরসা করার ব্যাপারেও সতর্ক করেন।

কোডিতোয়াক্কু বলেন, "সাইট্রাস ও লবঙ্গ পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গের জন্য একধরণের বিতাড়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাও ঘনীভূত আকারে। তারপরও সেটার কার্যকারিতা কয়েক ঘন্টার বেশি থাকে না।"

"সবচেয়ে বড় কথা, ফেসবুক পোস্টে বলা পদ্ধতিতে যে এডিস মশা দূরে থাকবে এরকম কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।"

তিনি বরং এক্ষেত্রে সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার উপর জোর আরোপ করেন।

তিনি বলেন, "ডেঙ্গু মোকাবেলায় আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সেটাকে মশার প্রজনন ক্ষেত্র না বানানোর উপর প্রাধান্য দেয়া উচিত।"

শ্রীলঙ্কার সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী সিট্রোনেলা তেল, নিমের তেল ও লেমনগ্রাস তেলকে প্রাকৃতিক মশা বিতাড়ক হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে।

অনর্থক নিরাপত্তার আশা

আমেরিকান মশা নিয়ন্ত্রণ অ্যাসোসিয়শনের কারিগরী উপদেষ্টা ড্যানিয়েল মার্কোস্কি মনে করেন এই পদ্ধতির উপর ভরসা করার মাধ্যমে মানুষের মনে এক ধরণের অসত্য নিরাপত্তাবোধ তৈরী করতে পারে।

তিনি এএফপিকে বলেন, কিছু কিছু উদ্ভিদের নির্যাস একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত মশা বিতাড়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।

তিনি বলেন, "ঘনীভুত লবঙ্গের তেলের মধ্যে মশা তাড়ানোর উপাদান থাকতে পারে। তবে শুধু লবঙ্গ কোন ফলের সাথে কোথাও রেখে দিলে নিশ্চিতভাবেই মশা তাড়ানোর কোন কাজে আসবে না।"

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ