এটি পাকিস্তানে ‘ধর্ষণ বিরোধী গেট’ নয়, ভারতে তালা দেয়া কবরের ছবি

কপিরাইট এএফপি ২০১৭-২০২3। সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত।

সামাজিক মাধ্যমে তালা দেয়া একটি কবরের ছবি পোস্ট করে অসত্যভাবে দাবি করা হচ্ছে যে, ছবিটি পাকিস্তানের একটি কবরস্থানের যেখানে নারীদের মরদেহ মাটির নিচ থেকে উঠিয়ে ধর্ষণ করা রোধ করতে কবরটি তালা দেয়া হয়েছে। যদিও পাকিস্তানে শবরথীর (নেক্রোফিলিয়া) ঘটনার খবর অতীতে প্রকাশিত হয়েছে তবে আলোচ্য ছবিটি ভারতের হায়দরাবাদে তোলা। স্থানীয় একটি মসজিদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একই জায়গায় অন্য পরিবারের সদস্যদের কবরস্থ যাতে না করা হয় সেজন্যই এভাবে অনেকে তাদের স্বজনদের কবর তালাবদ্ধ করে রাখেন।

গত ১ মে ফেসবুকে এই ছবিটি এখানে পোস্ট করে বাংলায় ক্যাপশন দেয়া হয়েছে: "কবর থেকে মৃতদেহ তুলেও ধর্ষণ! পাকিস্তানে মেয়েদের সমাধিস্থল লোহার খাঁচায় ঘিরছেন বাবা-মা।"

বাংলায় এখানে এবং এখানে ছাড়াও অন্যান্য ভাষায়ও এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় থাকা পাকিস্তানি লেখক হ্যারিস সুলতানও ছবিটি টুইট করে একই ধরনের ক্যাপশন দিয়েছেন এবং পাকিস্তানের "যৌনভাবে হতাশাগ্রস্ত সমাজের" নিন্দা জানিয়েছেন।''

পরে তিনি এই টুইটটি ডিলিট করে অন্য একটি টুইট শেয়ার করেন যেখানে দেখানো হয়েছে ছবির সাথে যুক্ত দাবিটি অসত্য ছিল। পাশাপাশি তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে, অতীতে পাকিস্তানে শবরথীর ঘটনা ঘটার খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

এই অসত্য তথ্যটি ভারতে টাইমস অব ইন্ডিয়া, এএনআই সংবাদ সংস্থা এবং হিন্দি ভাষী সংবাদপত্র আমার উজালা-সহ আরও অনেক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে ছবিটি পাকিস্তানে তোলা।

ভারতে তালাবদ্ধ কবর

টুইটারে কীওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায় ছবিটি ভারতীয় একজন এক্টিভিস্ট ৩০ এপ্রিল পোস্ট করেছেন।

মোহাম্মদ আসিফ খান, যিনি নিজেকে ইসলামোফোবিয়া এবং ঘৃণাবাদী অপরাধের ঘটনা ডকুমেন্টকারী হিসেবে পরিচয়দান করেন, গত ৩০ এপ্রিল টুইট করে জানান যে, ছবিটি পাকিস্তানে নয় বরং ভারতের হায়দরাবাদে তোলা।

এএফপি গুগল স্ট্রিট ভিউ ব্যবহার ছবিটিতে দৃশ্যমান জায়গাটিকে ভারতের হায়দরাবাদের মসজিদ-ই-সালার মুলক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কবরস্থানটি এই মসজিদের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত।

গত ২ মে এএফপির একজন সাংবাদিক কবরস্থানটিতে যান এবং কবরটির একটি ছবি তুলেন।

আসিফ খানের টুইটে মসজিদের মুয়াজ্জিনের একটি ভিডিও যুক্ত রয়েছে যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, অন্যদের লাশ বর্তমান কোন কবরে দাফন করা বন্ধ করতে এই লোহার গেইট লাগানো হয়েছে।

"কবরটি প্রায় ২ বছর পুরনো এবং এটিতে তালা দেয়ার কারণ হলো অনেকে কারো অনুমতি না নিয়েই বর্তমান কবরে নিজেদের স্বজনদের লাশ দাফন করে ফেলেন", বলেন মুয়াজ্জিন।

ভিডিওতে দেখা যায় মুয়াজ্জিন স্থানীয় সমাজকর্মী আব্দুল জলিলের সাথে কথা বলছেন, যিনি নিজে এএফপিকে জানিয়েছেন এই কবরে তার মাকে দাফন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, "অনেক সময় লোকজন অন্যের কবরেই নিজের স্বজনকে দাফন করেন। এতে (বহু বছর পর) নিজের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করতে এলে তাদের কবর খুঁজে পাওয়া যায় না।"