বিমান বিধ্বস্তের পুরনো ছবিকে ২০২২ সালের দুর্ঘটনা বলে ভুলভাবে প্রচার
- নিবন্ধটি এক বছর পুরনো
- প্রকাশিত 25 অক্টোবর 2022, 14:04
- আপডেট করা হয়েছে 26 অক্টোবর 2022, 12:58
- 4 এক্স মিনিটে পড়ুন
- লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
কপিরাইট © এএফপি ২০১৭-২০২৫। এই কন্টেন্টের যেকোন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
চলতি অক্টোবরের ১১ তারিখ ফেসবুক এখানে ছবি তিনটি পোস্ট করা হয় যা ৪০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে।
বাংলা ভাষায় পোস্টটিতে ছবিগুলোর ক্যাপশন লেখা হয়েছে: "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন। ইন্দোনেশিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় ১৭৮ জন মারা গেছে। আল্লাহ সবাই কে জান্নাত দান করুক..!"
তিনটি ছবির দুটিতে একটি বিমানকে দুই টুকরো অবস্থায় পানিতে বিধ্বস্ত দেখা যাচ্ছে। ভাসমান বিমানটির গায়ে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক এয়ারলাইন্স 'লায়ন এয়ার' লোগো দৃশ্যমান। এর মধ্যে একটি ছবিতে বিমানের চারপাশে একাধিক নৌকা এবং পাখার ওপর মানুষজনকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।
তৃতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে হিজাব পরিহিতা এক নারীকে প্রার্থনা করছেন।
এই ছবিগুলো একইরকম দাবি সহকারে ফেসবুকে অন্যত্র-- যেমন এখানে ও এখানে-- ২০০ এর অধিকবার শেয়ার হয়েছে।
কিন্তু দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ছবিগুলো ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের ভিন্ন দুটি বিমান দুর্ঘটনার খবরের সাথে পাওয়া গেছে।
প্রথম ছবি
লায়ন এয়ার এর বিধ্বস্ত বিমানের প্রথম ছবিটি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিমান দুর্ঘটনা সংক্রান্ত এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর এই রিপোর্টে-- যেটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদপত্র ইউএসএ টুডেতে ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল পূন:প্রকাশিত হয়েছিল-- প্রকাশিত হয়েছে।
রিপোর্টটি প্রথম প্যারায় বলা হয়েছে: "লায়ন এয়ার এর একটি যাত্রীবাহী বিমান বালি দ্বীপে অবতরণের সময় রানওয়েতে না নেমে কী কারণে সমুদ্রে ছিঁটকে পড়েছিল তা খুঁজে বের করতে ইন্দোনিশয়ার তদন্তকারীরা রোবাবার কাজ শুরু করেছেন। বিমানে থাকা ১০৮ জন যাত্রীর কেউ দুর্ঘটনায় নিহত হননি।"
প্রতিবেদনে ছবিটিকে এপি তোলা বলে উল্লেখ করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: "ইন্দোনেশিয়ার পুলিশের দেয়া এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে দেশটির বালি বিমানবন্দরের কাছে শনিবার পানির ওপর লায়ন এয়ার এর বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ভেসে রয়েছে।"
নিচে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ছবি (বামে) এবং এপির তোলা ছবি (ডানে) দুটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:
একই ছবি লায়ন এয়ার এর বিমান দুর্ঘটনার খবরের সাথে ২০১৩ সালে এখানে ও এখানে প্রকাশিত হয়েছে।
দ্বিতীয় ছবি
বিধ্বস্ত বিমানের দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ-এ লায়ন এয়ার এর দুর্ঘটনার খবরের সাথে এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
এই ছবির সৌজন্যে উল্লেখ রয়েছে: "এপি/ন্যাশনাল রেসকিউ টিম"-- যেটিকে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় বলা হয় 'বাসারনাস'।
ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: "ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল রেসকিউ টিম কর্তৃক সরবরাহকৃত এই ছবিতে শনিবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে লায়ন এয়ার এর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারীদের দেখা যাচ্ছে। ১৩ এপ্রিল, ২০১৩।"
নিচে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ছবি (বামে) এবং সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবি (ডানে) দুটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:
একই ছবি পরে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম news.com.au এর ২০১৩ সালের এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
একই বছর এএফপির এই প্রতিবেদন মতে, তদন্তকারীরা দুর্ঘটনার জন্য দুর্বল প্রশিক্ষণকে দায়ী করেছেন এবং বিমানের কোন ত্রুটি থাকার বিষয়টি তারা প্রাথমিক তদন্তে নাকচ করেছেন।
তৃতীয় ছবি
প্রার্থনারত হিজাবী নারীর ছবিটি ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ায় লায়ন এয়ার এর আরেকটি দুর্ঘটনা সংক্রান্ত এই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনের প্রথম প্যারায় বলা হয়েছে: "ইন্দোনিশেয়ার সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লায়ন এয়ার এর একটি ফ্লাইট ১৮৯ জন যাত্রী এবং ক্রুসহ জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে এবং কেউ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।"
এপির সৌজন্যে প্রকাশিত ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: "জাভা দ্বীপের কাছে লায়ন এয়ার এর বিধ্বস্ত বিমানের খবরের জন্য ইন্দোনেশিয়ার পাংকাল পিনাং অঞ্চলে দেপাতি আমির বিমানবন্দরে অন্যদের সাথে অপেক্ষমান এক নারী প্রার্থনা করছেন। ২৯ অক্টোবর ২০১৮।
পাংকাল পিনাং হল ইন্দোনেশিয়ার বাংকা-বেলিতাং প্রদেশের রাজধানী।
নিচে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ছবি (বামে) এবং ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবি (ডানে) দুটির তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেয়া হল:
একই ছবি এপির ওয়েবসাইটে এখানে প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৮ সালের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা সংক্রান্ত খবরে এএফপি জানায়, লায়ন এয়ার এর বিমানটি জাকার্তা থেকে পাংকাল পিনাংয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয়।
ইন্দোনেশিয়ায় সর্বশেষ ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে শ্রীউইজায়া এয়ার এর ৬২ জন যাত্রীবাহী একটি বিমান জাকার্তা থেকে রওয়ানা দেয়ার পর বিধ্বস্ত হয়েছে সব যাত্রী নিহত হন।
এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?
আমাদের সাথে যোগাযোগ