ভিডিওটি ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনায় এক সমাবেশের, স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হওয়া ফুটবল ভক্তদের নয়
রাস্তায় সমবেত বিপুল সংখ্যক মানুষের একটি ভিডিও ফেসবুকে কয়েক হাজার বার দেখা হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে ভিডিওটি গত ১ জুন অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনা ও ইতালির মধ্যকার ফিনালিসিমা ম্যাচের পূর্বে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের বাইরে সমবেত আর্জেন্টাইন সমর্থকদের দৃশ্য। দাবিটি অসত্য; ভিডিওটিতে ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
গত ১ জুন ফেসবুকের একটি পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের সামনের বর্তমান অবস্থা....।”
“আজ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মাঠে এবং মাঠের বাইরে আর্জেন্টাইন দের আধিপত্য থাকবে। আওয়াজ একটাই হবে ভ্যামোস আর্জেন্টিনা।”
ভিডিওটি সাত হাজারের বেশি দেখা হয়েছে এবং এতে সমবেত মানুষকে আর্জেন্টিনার পতাকা উড়াতে ও দেশটির জাতীয় সংগীত গাইতে দেখা যায়।

গত ১ জুন লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন ও কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফিনালিসিমায় আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে ইতালিকে পরাজিত করে।
ভিডিওটি একইরকম দাবি সহকারে ফেসবুকে এখানে ও এখানে শেয়ার করা হয়।
তবে দাবিটি অসত্য।
ক্লিপটিতে মূলত ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েনস আইরেসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাকরির সমর্থনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায় ভিডিও ক্লিপটি ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ইউটিউবে পোস্ট করা হয় যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “হাজারো আর্জেন্টাইন আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত গাইছেন। এটি দেখলে আপনার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে।”
নীচে বিভ্রান্তিকর পোস্টের ভিডিও (বামে) ও ইউটিউবের ভিডিওটির (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেওয়া হলো:

কীফ্রেম ব্যবহার করে সার্চ করে দেখা যায় ভিন্ন অবস্থান থেকে নেওয়া অনুরূপ দৃশ্যের একটি ভিডিও ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর টুইটারে পোস্ট করা হয়।
স্প্যানিশ ভাষার টুইটটিতে লেখা রয়েছে, “১৯৮৩ সালে আলফোনসিনের পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ। মাকরিকে নিয়ে মিথ্যাচার করা কে'র মিডিয়া এখন কি বলবে? কিছুই হারায়নি। আমরা যদি প্রতিটি ভোটের দায়িত্ব নিতে পারি তাহল কিছুই অসম্ভব নয়।”
নীচে বিভ্রান্তিকর পোস্টের ভিডিও (বামে) ও টুইটারের ভিডিওটির (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেওয়া হলো:

‘আলফোনসিন’ বলতে এখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাউল আলফোনসিনের কথা বলা হয়েছে যিনি আট বছরের সামরিক শাসনের পর ১৯৮৩ সালে আর্জেন্টিনার প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
‘কে’ বলতে সাবেক প্রেসিডেন্ট নেস্টর কির্চনার (২০০৩-২০০৭) ও তার স্ত্রী ও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা কির্চনারের কথা বোঝানো হয়েছে। ক্রিস্টিনা ২০১৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
‘মাকরি’ বলতে ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা মাউরিসিও মাকরিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
মাকরি ২০১৯ সালে পুনরায় নির্বাচরে অংশ নেন এবং সেবছর ১৯ অক্টোবর রাজধানী বুয়েনস আইরেসের ওবেলিসক সৌধের পাশে তার সমর্থনে বিশাল সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।
এই সমাবেশ নিয়ে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর প্রকাশিত এএফপির প্রতিবেদনেও বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিওর কিছু মিল পাওয়া যায়।
গুগল স্ট্রিটভিউয়ে পাওয়া ওবেলিসক সৌধের আশপাশের দৃশ্যের সাথে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
স্ট্রিটভিউয়ে দৃশ্যমান ম্যারিয়ট হোটেলটি ফেসবুক ভিডিওর ৪৫ সেকেন্ডে দেখা যায়।
সমাবেশটির আটদিন পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আলবার্তো ফার্নান্দেজ ও তার সহযোগী সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা কির্চনারের কাছে মাকরি পরাজিত হন।