ভিডিওর এই ব্যক্তি শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী নন, সাবেক এক পৌরসভা কাউন্সিলর
ফেসবুকে একটি ভিডিও হাজারেরও বেশিবার দেখা হয়েছে যেখান দাবি করা হচ্ছে ভিডিওটিতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চলা অচলাবস্থার সময় দেশটির তথ্যমন্ত্রীকে সাধারণ জনতার হাতে প্রহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। দাবিটি বিভ্রান্তিকর; ভিডিওর এই ব্যক্তি শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী নন, বরং রাজধানী কলম্বোর সাবেক এক পৌরসভা কাউন্সিলর।
ভিডিওটি গত ১১ মে ফেসবুকে এখানে শেয়ার করা হয়।
এতে একটি আবাসিক এলাকার রাস্তায় এলোমেলোভাবে এক ব্যক্তিকে হাঁটতে দেখা যায়।
পরবর্তীতে তাকে এক ঘরের প্রবেশদ্বারে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতেও দেখা যায়।

ফেসবুক পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “শ্রীলংকান তথ্যমন্ত্রী। দুনিয়ার ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়।”
গভীর অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে সম্প্রতি দেশটিতে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, উত্তেজিত জনসাধারণ বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।
ভিডিওটি একইরকম দাবি সহকারে ফেসবুকে এখানে ও এখানে শেয়ার করা হয়।
তবে দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
সাবেক কাউন্সিলর
ভিডিওটিতে মূলত শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন এসএলপিপি (শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্ট) দলের একজন সমর্থক ও সাবেক পৌরসভা কাউন্সিলর মাহিন্দা কাহানদাগামাকে দেখা যাচ্ছে।
একই ভিডিও গত ৯ মে শ্রীলঙ্কার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি মিরর এর টুইটারে পোস্ট করা হয়।
টুইটটির ক্যাপশন লেখা রয়েছে: “কলম্বো মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলরস অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন অব দ্য শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্টের সভাপতি মাহিন্দা কাহানদাগামা আজ সকালে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের সমর্থনে টেম্পল ট্রি গেটের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।”
মাহিন্দা রাজাপাকসে ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে যেদিন এই টুইটটি করা হয় সেদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
নীচে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিও (বামে) ও টুইটার ভিডিওটির (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেওয়া হলো:

নীচে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিও (বামে) ও কাহানদাগামার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া ছবির (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেওয়া হলো:

বিভ্রান্তিকর ফেসবুক পোস্টের ভিডিওর ব্যক্তির সাথে কাহানদাগামার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের এই ব্যক্তির চেহারার যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।
কাহানদাগামার উপর আক্রমণের ঘটনার আরেকটি প্রতিবেদন গত ৯ মে শ্রীলঙ্কার নিউজ নাইন্টিনে প্রকাশিত হয়।
সিংহলিজ ভাষার প্রতিবেদনটির অংশবিশেষে লেখা রয়েছে, “সাবেক পৌরসভা কাউন্সিলর ও ফেডারেশন অব দ্যা সেল্ফ এমপ্লয়েড এর সভাপতি মাহিন্দা কাহানদাগামার উপর হামলা হয়েছে।”
“তিনি কলম্বোতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা করতে ও আগুন দিতে আসলে এই ঘটনা ঘটে।”
ভুল পরিচয়
শ্রীলঙ্কার বর্তমান তথ্য ও গণমাধ্যম বিষয়ক মন্ত্রীর নাম নালাকা গোডাহেওয়া।
শ্রীলঙ্কার সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তার একটি ছবি নীচে দেওয়া হলো:

গোডাহেওয়া এএফপিকে বলেন, “আমার উপর আক্রমণ হয়নি। ভিডিওর এই ব্যক্তি আমি নই।”
তিনি আরো বলেন, “উত্তেজিত জনতা আমার বাড়িতে আক্রমণ করেছে ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তবে আমি সেসময় বাড়িতে ছিলাম না।”
তার বাড়িতে আগুন দেয়ার ব্যাপারে গোডাহেওয়া গত ১২ মে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি নিউজের সাথেও কথা বলেন।