পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ডের ভিডিওকে চীনের উড়োজাহাজ ধ্বংসের দৃশ্য বলে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার

গত ২১ মার্চ ১৩২ জন যাত্রী নিয়ে চীনের গুয়াংজি প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি ধ্বংস হওয়া উড়োজাহাজ থেকে নির্গত ধোঁয়ার দৃশ্য। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মাইল দূরের চীনের পূর্বাঞ্চলের সাংহাংয়ের একজন সরকারি মুখপাত্র জানান যে, ভিডিও ক্লিপটিতে মূলত পার্বত্য এলাকার একটি অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে যা উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার একদিন আগে সংঘটিত হয়। সাংহাং অঞ্চলের এক ব্যক্তিও এএফপিকে পৃথকভাবে জানান ভিডিওটিতে অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদেরকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে যারা তাদের কথোপকথনে এক সমাধি পরিস্কারকারীর খামখেয়ালিপনাকে ঘটনাটির জন্য দায়ী করছেন। ভিডিওটি যে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার আগের তার প্রমাণও সেই ব্যক্তি সরবরাহ করেছেন।

গত ২১ মার্চ ফেসবুকে এখানে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। 

Image
( Mohammad MAZED)

পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “১৩৩ আরোহী নিয়ে চীনে বিমান বিধ্বস্ত।”

শুধু এই পোস্টের ভিডিওটিই প্রায় দুই হাজার বার দেখা হয়েছে। 

৫১ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটিতে একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা যায়। 

ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে কয়েকজনকে কথা বলতেও শোনা যায়। 

গত ২১ মার্চ চীনের গুয়াংজি প্রদেশের উঝোউয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে একটি যাত্রীবাহী বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভিডিওটি অনলাইনে ছড়ায়। 

মার্চের ২৩ তারিখ উড়োজাহাজটির একটি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হলেও ১৩২ আরোহীর কাউকেই জীবিত পাওয়া যায়নি। 

ভিডিওটি ফেসবুকে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম এটিএন নিউজযমুনা টিভির প্রতিবেদনেও ব্যবহৃত হয়। 

একই সাথে প্রথম আলো, যুগান্তর, ঢাকা পোস্ট, ও চ্যানেল আইর অনলাইন সংস্করণে ভিডিওটি থেকে নেয়া স্থিরচিত্র ব্যবহৃত হয়। 

তবে ভিডিও ক্লিপটি বিভ্রান্তিকরভাবে শেয়ার করা হয়েছে। 

পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ড

কীওয়ার্ড সার্চে চীনের সংবাদমাধ্যম 'মডার্ন এক্সপ্রেস পোস্ট' এর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে এই ভিডিওটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান থেকে ৫০০ মাইল (৮০০ কিলোমিটার) দূরে ফুজিয়ান প্রদেশের লোঙ্গান শহরের নিকটে সংঘটিত এক অগ্নিকাণ্ডের বলে জানা যায়।

লোঙ্গানের সাংহাং কাউন্টির একজন সরকারি মুখপাত্র এএফপিকে জানান, এই ভিডিওটি গত ২০ মার্চ স্থানীয় একটি গ্রামের পাহাড়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের। 

তিনি বলেন, “অনলাইনে ছড়ানো ভিডিওটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানের নয়, বরং গত ২০ মার্চ সাংহাং কাউন্টিতে সংঘটিত একটি অগ্নিকাণ্ডের।

সরকারের এই মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী টোম সুইপিং বা সমাধি পরিস্কারকার্যের সময় আগুনের সূত্রপাত হয়। টোম সুইপিং হলো সেখানে স্থানীয় অধিবাসিদের কর্তৃক পূর্বপুরুষদের সমাধি পরিস্কার করার একটি রীতি। 

এএফপি লিন নামের এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে যিনি নিজেকে অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার গ্রাম লোংপাই এর নিকটবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দা বলে দাবি করেন। 

তিনি ভিডিও ক্লিপটির ২০ মার্চেের একটি ভার্সনের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যে মেসেজিং অ্যাপ 'উইচ্যাট' এর একটি গ্রুপে ভিডিওটি আদান প্রদানের স্ক্রিনশটও এএফপিকে সরবরাহ করেন। 

নীচে মেসেজ দেয়ার সময়কে লাল রঙে হাইলাইট করে স্ক্রিনশটটি দেওয়া হলো:

Image

নীচে বিভ্রান্তিকর পোস্টের ভিডিও (বামে) ও ২০ মার্চ উইচ্যাট গ্রুপে শেয়ার হওয়া ভিডিওর (ডানে) একটি তুলনামূলক স্ক্রিনশট দেওয়া হলো:

Image

এএফপি বাইদু ম্যাপসের মাধ্যমে গ্রামটিকে এখানে চিহ্নিত করেছে। এতে ভিডিওতে দৃশ্যমান পাহাড়ি অঞ্চলের অনুরূপ স্থান দেখা যায়। 

লিন এএফপিকে জানান, ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড স্থানীয় হাক্কা ভাষায় কয়েকজনকে কথা বলতে শোনা যায়। 

তিনি এএফপিকে কথোপকথনটির একটি ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠান যাতে এক ব্যক্তি সমাধি পরিস্কারকারীর খামখেয়ালিপনাকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন। 

তার অনুবাদ অনুযায়ী এক নারীকে বলতে শোনা যায়, “কী ভয়াবহ আগুন। সমাধি পরিস্কারের জন্য যে ব্যক্তি সেখানে গেছে সে আসলেই একটি বিপদ (ডেকে এনেছে)। খুবই অসতর্ক।”

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ