সৌদি পতাকার এই ছবিটি ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানী রিয়াদে তোলা ( AFP / FAYEZ NURELDINE)

সৌদি পতাকা থেকে ইসলামি শপথবাক্য বাদ দেয়ার পরিকল্পনার বিভ্রান্তিকর খবর সংবাদমাধ্যমে

কপিরাইট এএফপি ২০১৭-২০২3। সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত।

বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এমন দাবি সহকারে খবর প্রকাশ করেছে যে, সৌদি আরব দেশটির পতাকা থেকে ইসলাম ধর্মীয় শপথবাক্য (কালেমা তাইয়েবা) বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশি মিডিয়ার রিপোর্টে খবরটির সূত্র হিসেবে সৌদি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম 'সৌদি প্রেস এজেন্সি'র (এসপিএ) বরাত দেয়া হয়েছে। কিন্তু এসপিএ তাদের ৩১ জানুয়ারি ২০২২ তারিখের রিপোর্টে শুধু জানিয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ একটি আইনের খসড়া সংশোধনী অনুমোদন করেছে যেখানে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নীতিমালায় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, পতাকায় কোনো ধরনের বদলের কথা বলা হয়নি। সৌদির পতাকার ডিজাইন পরিবর্তনের বিষয়ে দেশটির সরকারের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য সম্বলিত কোনো রিপোর্ট ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ পর্যন্ত এএফপি খুঁজে পায়নি।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে বাংলাদেশি অনলাইন সংবাদমাধ্যম Banglanews24.com "সৌদি আরবের পতাকায় থাকছে না কালেমা তাইয়েবা" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

 'কালেমা তাইয়েবা' একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হলো 'পবিত্র বাক্য'। এটি দিয়ে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস স্থাপনের ঘোষণাকে বুঝানো হয়ে থাকে যার বাংলা অর্থ হলো: "আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল।"

সৌদি আরবের সবুজ রঙের পতাকায় একটি তরবারির উপরে কালেমা তাইয়েবা খচিত রয়েছে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বাংলানিউজ এর বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট

Banglanews24.com এর প্রতিবেদনে সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) এর বরাতে বলা হয়েছে: "জাতীয় পতাকা ও সংগীতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সৌদি আরব সরকার। দেশটির নতুন পতাকা থেকে পবিত্র কালেমা তাইয়েবা তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সেখানে আরবি ও ইংরেজিতে লেখা থাকবে সৌদি আরবের নাম।"

বাংলাদেশি অন্যান্য কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টেও এসপিএ এবং নামহীন 'সৌদি সংবাদমাধ্যম' এর বরাতে দাবি করা হয় যে, সৌদি সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টা পরিষদ 'শুরা কাউন্সিল' একটি আইনের খসড়া সংশোধনী গ্রহণের পক্ষে ভোট দিয়েছে যেখানে পতাকা থেকে কালেমা তাইয়েবা তুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের এরকম কয়েকটি রিপোর্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানেএখানে

একই খবর সম্বলিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে এখানে যা পাঁচ মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছে।

কিন্তু খবরটি বিভ্রান্তিকর।

৩১ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিল 'পতাকা আইন' নামে একটি আইনের খসড়া সংশোধনী অনুমোদন দেয়। সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট মতে, এই সংশোধনীর উদ্দেশ্য দেশটির পতাকা ব্যবহারের নিয়মকানুন সংস্কার করা, পতাকায় কোনো পরিবর্তন আনা নয়।

সৌদি গেজেট পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে: "সোমবার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সৌদি শুরা কাউন্সিল জাতীয় পতাকা, প্রতীক ও জাতীয় সঙ্গীত সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী অনুমোদন করেছে, তবে এসবের বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।"

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, সংশোধনীতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে পতাকা, প্রতীক ও জাতীয় সঙ্গীতের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং "পতাকা, প্রতীক ও জাতীয় সঙ্গীতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং পতাকাকে অবমাননা থেকে রক্ষা করা"। 

৩১ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ এক প্রতিবেদনে জানায় যে, কাউন্সিল কর্তৃক খসড়া সংশোধনীটি অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু তাতে পতাকা থেকে কালেমা তাইয়েবা সরিয়ে দেয়ার কোনো সিদ্ধান্তের তথ্য ছিল না।

এর বাইরে এসপিএ'র ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত আর কোনো প্রতিবেদন পায়নি এএফপি।

এসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সি রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এই প্রতিবেদনে জানিয়েছে সৌদি পতাকায় কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।

আরব সংবাদমাধ্যম আশরাক আল আওসাত তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে: "সংশোধনীটি পতাকা, প্রতীক ও জাতীয় সঙ্গীতের (ব্যবহার)পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং এগুলোর কোনোটির বিষয়বস্তু বা আকৃতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।"

দেশটির পতাকা আইনের বর্তমান সংস্করণ গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে এএফপি যাচাই করে দেখেছে। তাতে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লিখিত পরিবর্তনগুলোর কিছু পাওয়া যায়নি।

এছাড়া এএফপি সৌদি শীর্ষ উপদেষ্টা পরিষদের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পায়নি যেখানে পতাকার ডিজাইন পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।