ব্যবহারকারীর কন্টেন্টের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার গুজব ফেসবুকের প্রত্যাখ্যান

ফেসবুকের প্যারেন্ট কোম্পানী মেটা নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ছবি, মেসেজ ও অন্যান্য কন্টেন্ট অবাধে ব্যবহারের সুযোগ পাবে এরকম একটি তথ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনলাইনে ছড়িয়েছে। দাবিটি অসত্য; একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও ফেসবুকের বরাতে জানা যায় খবরটি ভুয়া ও ভিত্তিহীন। ২০২০ সালেও এরকম অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া দাবি অসত্য বলে চিহ্নিত করেছিল এএফপি।

গত ২৪ নভেম্বরের একটি ফেসবুক পোস্টে লেখা রয়েছে, “আগামীকাল থেকে নতুন ফেসবুক/মেটা নিয়ম শুরু হবে যেখানে তারা আপনার ছবি ব্যবহার করতে পারবে। ভুলে যাবেন না, আজ শেষ দিন! তাই একটা কাজ করে রাখুন। এটি আপনার বিরুদ্ধে মামলায় ব্যবহার করা যেতে পারে; আপনি যা কিছু পোস্ট করেছেন - এমনকি মেসেজ যা মুছে ফেলা হয়েছে। এতে কোন খরচ নেই, শুধু কপি করে পোস্ট করুন, পরে আফসোস করার চেয়ে ভালো হবে।”

“ইউসিসি আইনের অধীনে ১-২০৭, ১-৩০৮... আমি আমার অধিকার সংরক্ষণ আরোপ করছি...আমি ফেসবুক/মেটা বা অন্য কোন ফেসবুক/মেটা সম্পর্কিত ব্যক্তিকে আমার ছবি, তথ্য বা বার্তা ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছি না, অতীতে এবং ভবিষ্যতে কোন সময়েই।”

“এই পোস্টেটি কপি করে আপনার নিজের পেজে পোস্ট করে রাখুন এবং ঘোষণা দিন যে, আপনি ফেসবুক/মেটা-কে তাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা আমার তথ্য অন্য কোথাও শেয়ার করার অনুমতি দিচ্ছি না। ছবি, বর্তমান বা অতীত, বন্ধু-বান্ধব, ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস, ব্যক্তিগত কোন তথ্য বা পোস্ট এ সবের কোন কিছুই আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া ভিন্নরূপে ব্যবহার করা যাবে না।”

Image
( Mohammad MAZED)

ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ গত অক্টোবরে ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপ ও ইন্সটাগ্রামের সত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে 'মেটা' তে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেন।  

একই রকম বার্তা যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ডের মতো দেশেও ছড়িয়েছে। 

তবে দাবিটি অসত্য।

থাইল্যান্ড ও লাওসে ফেসবুকের কমিউনিকেশন ম্যানেজার মানাশ্চেন কোভাপিরাত এএফপিকে বলেন, “আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে তথ্যটি সত্য নয়।”

তিনি বলেন, “ব্যবহারকারীরা যেকোন সময় তাদের প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করতে পারেন এবং প্রাইভেসি চেক-আপ টুল ব্যবহার করে তাদের পোস্ট ও তথ্য কে দেখতে পারবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং তাদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে পারেন।” 

ফেসবুকের শর্তাবলী অনুযায়ী কোম্পানীটির নাম পরিবর্তনের সাথে তথ্য ব্যবহারে নীতিমালায় কোন পরিবর্তন আসেনি।  

কোম্পানীটির ভাষ্য অনুযায়ী, “ফেসবুক কোম্পানীর নাম এখন মেটা। কোম্পানীর নাম পরিবর্তন হলেও ফেসবুক অ্যাপসহ অন্যান্য সেবা অপরিবর্তিত থাকবে। আমাদের ডেটা পলিসি এবং শর্তাবলী আগের মতোই কার্যকর থাকবে এবং এই নাম পরিবর্তন আমাদের তথ্য ব্যবহার ও শেয়ার করার নীতিমালায় কোন পরিবর্তন আনবে না।”

সামাজিক যোগাযোগের এই জায়ান্ট কোম্পানীর ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহের নীতিমালা দেখা যাবে এখানে। 

                                                                                                  'অসত্য দাবি'

একজন সাইবার নিরাপত্তা জানান যে ছড়িয়ে পড়া বার্তাটি অসত্য। 

উত্তর আয়ারল্যান্ডের উলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তার অধ্যাপক কেভিন কারেন এএফপিকে বলেন, “আপনি যদি কোন একটি সামাজিক মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেন তবে তারা আপনার সকল তথ্যই মুছে ফেলে। এতে কয়দিন সময় লাগতে পারে তবে নিশ্চিতভাবে মুছবে।”

তিনি আরো বলেন, “ফেসবুক বা মেটা মুছে ফেলা কোন অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করে না। কয়েকবার তারা এটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে।”

২০২০ সালেও এএফপি এরকম দাবির অসত্যতা নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল।   

এএফপি বিশ্বের ৮০ টিরও বেশি দেশে ২৪ টি ভাষায় ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের সাথে কাজ করে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এই প্রোগ্রামের অধীনে ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপ ও ইন্সটাগ্রামে ফ্যাক্ট চেক সেবার জন্য প্রায় ৮০ টি সংস্থাকে অর্থ প্রদান করে যার মধ্যে বিভিন্ন সংবাদমধ্যম থেকে শুরু করে স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাও রয়েছে।

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ