খনির বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষের ক্লিপ, বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর 'উগ্রপন্থী হিন্দুদের' আক্রমণের নয়

পাঞ্জাবের একটি হাসপাতালে একটি নির্মম সংঘাতের ঘটনায় কোনও বাংলাদেশি জড়িত ছিল না বলে জানিয়েছে ভারতীয় পুলিশ। তবে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ছড়ানো একটি ভিডিওকে “ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের” পরিচালিত হামলার বলে দাবি করা হয়েছে। নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পটভূমিতে গ্রাফিক ফুটেজটি ছড়ানো হলেও,  ভিডিওটি এর আগে একটি অবৈধ খনি বিতর্কে একদল লোকের সংঘাতের সংবাদ প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত হয়েছিল। 

সতর্কতা: গ্রাফিক ভিজ্যুয়াল

২০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ছড়ানো একটি ফেসবুক ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া, বাংলাদেশি সন্দেহে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীও তাদের স্বজনদের নির্ম*মভাবে নির্যা*তন করছে ভারতীয় উ*গ্র হিন্দু*ত্ববাদী সন্ত্রা*সীরা। ভারতকে এড়িয়ে চলুন”।  

অন্তত ২৩,০০০ বারের বেশি ভিউ হওয়া ভিডিওটিতে সংঘর্ষে  জড়িত লোকজনকে হাসপাতালের সরঞ্জাম তুলে একে অন্যকে আঘাত করতে দেখা যায়। 

Image
৪ জুন ২০২৫ তারিখে নেয়া অসত্য পোস্টের স্ক্রিনশট

ভিডিওটি মে মাসে একই ধরনের পোস্টে ফেসবুকে অন্যত্র এখানে ও এখানে ছড়ানো হয়েছে। 

এসব পোস্টের একটি মন্তব্য বলা হয়, "ভারতের অনেক লোক বাংলাদেশে বাস করে, তাদের কপালে এবার দু:খ আছে”। 

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের আগস্টে এক অভ্যুত্থানে নয়াদিল্লির পুরনো মিত্র শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রতিবেশী ভারতের সাথে দেশটির সম্পর্কের অবনতির মধ্যে পোস্টগুলি ছড়ানো হয় (আর্কাইভ লিংক)।

হাসিনা হেলিকপ্টার যোগে ভারতে পালিয়ে যান এবং স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন। তার সরকারকে উৎখাত আন্দোলনের সময় শত শত বিক্ষোভকারীকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে নয়াদিল্লির কাছে হাসিনাকে ফেরত চেয়েছে ঢাকা।

এদিকে, সংখ্যালঘু হিন্দু নাগরিকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ করছে নয়াদিল্লি। তবে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। 

কিন্তু অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ভারতীয় হাসপাতালে বাংলাদেশিদের নির্যাতিত হওয়ার নয়। 

'খনি বিতর্কে' সংঘাত

অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিওটির কিফ্রেম ব্যবহার করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চে  ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ইউটিউবে প্রকাশিত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে একই ফুটেজটি পাওয়া যায় (আর্কাইভ লিংক)। 

প্রতিবেদনটির শিরোনামে বলা হয়, “গ্রামের খনির বিরোধ নিয়ে পাঞ্জাবের ডেরা বাসি হাসপাতালে সংঘর্ষ”।   

Image
অসত্যভাবে ছড়ানো ভিডিও(বামে) এবং ইউটিউবে প্রকাশিত এনডিটিভির প্রতিবেদনের তুলনামূলক স্ক্রিনশট

ভিডিওটির বিবরণ অনুসারে, চণ্ডীগড়ের ডেরা বাসির একটি হাসপাতালে এই সংঘর্ষ হয়। "মুকন্দপুর গ্রামে কথিত অবৈধ খনির বিরোধ" নিয়ে সংঘতের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।

এতে আরও বলা হয়, "বিশৃঙ্খলার কারণে রোগী এবং হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ার্ত ব্যক্তিরা নিরাপত্তার জন্য প্রাঙ্গণ ছেড়ে পালিয়ে যায়”।  

এই সংঘর্ষ নিয়ে অন্যান্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন করেছে (আর্কাইভ লিংক এখানে এবং এখানে)।

তবে বাংলাদেশি নাগরিকরা এই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে কোনও প্রতিবেদনেই বলা হয়নি। 

ডেরা বাসি পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট বিক্রমজিত সিংহ ব্রার এএফপিকে জানান যে, ১১ এপ্রিল ডেরা বাসি সিভিল হাসপাতালের সংঘর্ষটি একদল স্থানী লোকের মধ্যে হয়েছিল।  

তাদের মধ্যে কেউ বাংলাদেশি নাগরিক ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রার জানান, "না, তাঁরা শুধুমাত্র পাঞ্জাবের স্থানীয় লোক ছিলেন"।

শেখ হাসিনার পতনের পর অসত্যভাবে ছড়ানো অন্যান্য দাবি খণ্ডণ করে প্রতিবেদন করছে এএফপি। 

এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?

আমাদের সাথে যোগাযোগ