মহাকাশ নিয়ে উৎসাহী মার্কিন তরুণীকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর জন্য মনোনীত করা হয়নি
ফেসবুকে বেশকিছু পোস্টে ২০ বছর বয়সী আমেরিকান তরুণী এলিসা কার্সনকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর জন্য মনোনীত প্রথম মানুষ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। দাবিটি অসত্য; অদ্য ৫ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত নভোচারী হওয়ার জন্য প্রযোজ্য যোগ্যতা এলিসার হয়নি এবং মঙ্গলে যাওয়ার প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াও এখনো পরীক্ষাধীন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এলিসা কারসনের মঙ্গল অভিযানে যোগ দেওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি।
গত ১৮ জুলাই, ২০২১ এ ফেসবুকে এখানে একটি ছবিসহ পোস্টটি করা হয়।

ছবিটির ভেতরে লেখা আছে, ''মঙ্গল গ্রহে গিয়ে পৃথিবীতে আর ফিরে আসবে না যে মেয়েটি, তিনি হলেন এলিজা কার্সন। নাসার কনিষ্ঠতম সদস্য। এই মেয়ের আগ্রহ, তৃষ্ণা আর নিষ্ঠা দেখে মাত্র ১১ বছর বয়সে নাসা তাকে মনোনীত করে নেয় এবং ঘোষণা করে যে সমস্ত অবস্থা অনুকূল হলে সে হবে ২০৩৩ সালে মঙ্গলে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানুষ। এখন তার বয়স ১৭। যেহেতু সে মঙ্গলে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম তাই নাসার কাছে সে কোন প্রকার যৌনতা, বিয়ে বা সন্তানধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্র তে সাক্ষর করেছে। ভাবতে অবাক লাগে, মানুষের স্বপ্ন কত বড় হতে পারে!!
এলিজা জানে, সে আর ফিরে আসবেনা এই পৃথিবীতে, আর মাত্র ১৪/১৫ বছর পরে একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে কোটি কোটি মাইল দূরের লোহার লালচে মরিচায় ঢাকা প্রচন্ড শীতল নিষ্প্রাণ গ্রহের ক্ষীয়মাণ নীল নক্ষত্রের নিচে হারিয়ে যাবে। সেই একা হারিয়ে যাওয়া তার কাছে কত বড় আনন্দ!! সেই আনন্দের কাছে পৃথিবীর এসব সাজানো সংসার প্রেম সন্তানাদি এসবের আনন্দ নির্বিঘ্নে বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে। এলিজা কার্সন আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়।''
মঙ্গলে যাওয়া প্রথম মানুষদের একজন হওয়ার জন্য এলিসা কার্সনের উৎসাহের খবরটি বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে। বর্তমানে স্নাতকে অধ্যয়নরত এই তরুণীর ওয়েবসাইট ও লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী তিনি বিভিন্ন ধরণের স্পেস ক্যাম্প ও একাডেমিতে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রথম মানুষ হিসেবে এলিসার মঙ্গলে যাওয়ার খবরটি ফেসবুকে এখানে ও এখানে পোস্ট করা হয়।
কিন্তু দাবিটি অসত্য।
৫ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, এলিসা কার্সন নভোচারী হওয়ার জন্য প্রযোজ্য যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারেননি।
গত ১ এপ্রিল ২০২১ এ প্রকাশিত এবিসি অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এলিসা বলেন, ''নভোচারী হওয়ার জন্য আবেদন করার যোগ্য হতে হলে আমার মাস্টার্স তথা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন। একইসাথে কাজেরও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এটি খুবই কঠিন প্রতিযোগিতা।''
অদ্য ৫ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত এলিসার ওয়েবসাইট, ভেরিফায়েড সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইল (টুইটার, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম) অথবা কোন সংবাদমাধ্যমের খবর কোথাও মঙ্গল অভিযানের জন্য তার মনোনীত হওয়ার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
নাসা' জানিয়েছে, সংস্থাটি মঙ্গলে অভিযানের জন্য কোন নভোচারীকে এখনো মনোনীত করেনি।
সংস্থাটি আরো জানায়, তারা এখনো চাঁদে যাওয়ার জন্য তাদের আর্টেমিস প্রকল্পের নভোচারীদেরই এখনো মনোনীত করেনি। এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য মূলত মঙ্গলে অভিযানের পূর্বে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা।
নাসা'র জনসংযোগ কর্মকর্তা ক্যাথরিন হ্যাম্বলটন এএফপি'কে বলেন, ''এখন পর্যন্ত আমরা আর্টেমিস অথবা মঙ্গল অভিযান কোনটার জন্যই সদস্য নির্বাচিত করিনি।''
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা ২০৩০ সালের দিকে মঙ্গলে মানুষ পাঠাতে আশাবাদী।
নাসা'র ভাষ্যমতে, ''২০৩০ সালে মঙ্গলে মানব অভিযানের জন্য প্রযুক্তি তৈরীর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব সক্ষমতার অনেকগুলোই আগামী চন্দ্র অভিযানে আর্টেমিস প্রকল্পে দেখা যাবে, আর অন্যান্য প্রযুক্তি মহাকাশের আরো গভীরে অভিযানের জন্য নির্মিত।''
হ্যাম্বলটন জানান, এলিসা কার্সনের সাথে নাসার কোন 'আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক' নেই।
তিনি বলেন, ''নাসার মূল মিশন এবং সার্বিকভাবে এর মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কে সম্পৃক্ততা বাড়াতে আমরা বিভিন্নভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যুক্ত হই। তবে এলিসা কার্সনের সাথে আমাদের কোন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।''
নাসার মঙ্গল অভিযানে যারা যাবেন তারা পৃথিবীতে ফিরবেন নাকি ফেরার সম্ভাবনা নেই এমন প্রশ্নের জবাবে হ্যাম্বলটন বলেন, ''আমরা যেকোনভাবে আমাদের অভিযানের সদস্যদের ফিরে আসা নিশ্চিত করবো।''
এ সংক্রান্ত এএফপির ইংরেজি ফ্যাক্ট চেক দেখুন এখানে।