লেবুর রস মিশ্রিত গরম পানি পানে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস হয় না
- নিবন্ধটি এক বছর পুরনো
- প্রকাশিত 8 আগস্ট 2021, 13:51
- 3 এক্স মিনিটে পড়ুন
- লেখক: এএফপি বাংলাদেশ
কপিরাইট © এএফপি ২০১৭-২০২4। এই কন্টেন্টের যেকোন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
'বিষয় টি খুবই জরুরী' বিষয় বলে শুরু হওয়া ২০১৮ সালের ১ আগস্ট প্রকাশিত একটি ফেসবুক পোস্ট গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশিবার শেয়ার হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, 'বেইজিং সামরিক হাসপাতালের চীফ এক্সিকিউটিভ অধ্যাপক চেন হোরিন বলেন, গরম পানির গ্লাসে লেবুর টুকরা আপনার বাকি জীবনের জন্য আপনাকে বাচাতে পারে।"
পোস্টে আরও লেখা রয়েছে 'গরম লেবু ক্যান্সার কোষ কে মেরে ফেলতে পারে। একটা লেবু তিন টুকরা করে কেটে একটা কাপে রাখুন। তার পর গরম পানি ঢালুন। এটি (alkaline পানি) হয়ে যাবে। প্রতিদিন এটা পানে অবশ্যই সবার বিশেষ উপকারে আসবে।'
একই ধরনের পোস্ট ফেসবুকে ছড়াচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। এবং সর্বেশষ এটি নতুন করে এখানে ও এখানে পোস্ট করা হয়েছে গত ২৩ জুলাই।
কিন্তু দাবিটি অসত্য।
'বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই'
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেছেন, লেবুর রস ক্যান্সার সারাতে পারে এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি এএফপি'কে বলেন, 'কেউ এমনটা বলতে পারে না যে, লেবুর রস মিশ্রিত গরম পানি বা অন্য কোনো বিশেষ খাবারের মাধ্যমে ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করা যায় এবং এই ধরনের দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ক্যান্সারের অনেক প্রকার আছে এবং সেগুলোর বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু এসব পদ্ধতির মধ্যে লেবুর রস মিশ্রিত গরম পানি সেবন বলতে কিছু নেই।'
'লেবুসহ সিট্রাস গোত্রীয় কিছু ফল কিছু বিশেষ ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে কখনো কখনো ইতিবাচক প্রভাব রাখে কিন্তু এটা কোনো চিকিৎসা নয়', বলেছেন অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন।
প্যারিসের সেন্ট লুই হাসপাতালের ব্লাড ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিকোলাস বয়সেল-ও একই ধরনের মত পোষণ করেন।
২০১৯ সালে যখন অন্যান্য ভাষায় ক্যান্সার চিকিৎসায় লেবুর রস মিশ্রিত গরম পানির ব্যবহার সংক্রান্ত দাবি ছড়িয়েছিলো তখন তিনি এএফপি'কে বলেছিলেন, 'গরম পানি কিম্বা লেবু বা সুগারমুক্ত খাদ্যাভ্যাস কোনোটিই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে কোনো প্রমাণ নেই। লেবুর কিছু উপাদানের (অন্যান্য আরও অনেক ফলমূলের মতো) ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু সক্রিয়তা রয়েছে। সম্ভবত এ কারণেই এমন ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
অনকোলোজিস্ট এবং ফ্রান্সের রেইম শহরে গদিনত ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক হার্ভে কুর-ও এই গুজবকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি এএফপি'কে বলেন, 'এটা নিশ্চিতভাবে অসত্য। এমন দাবির কোনো যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে উপকারি কিছু খাবার আছে, তবে লেবু সেগুলোর মধ্যে নয়। কয়েক ধরনের খাবার আছে যেমন হলুদ; যেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে কিন্তু রোগটির চিকিৎসায় এগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই। '
এই গুজবটি ২০১১ সালেও অনলাইনে ছড়িয়েছিলো এবং তখন আমেরিকান ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট স্নোপস এটাকে ভুয়া বলে প্রমাণ করেছিলো।
'ভুয়া' অধ্যাপক:
ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোতে ভুয়া দাবিটির সাথে বেইজিং সামরিক হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরিচয়ে Chen Horin নামে একজন অধ্যাপকের বরাত দেয়া হয়েছে। কিন্তু এএফপি এই নামের বানানে কোনো অধ্যাপকের সন্ধান পায়নি।
তবে Chen Huiren নামে (Horin নয়) বেইজিং সামরিক হাসপাতালের একজন সত্যিকার অধ্যাপকের সন্ধান পাওয়া গেছে। হাসপাতালের ওয়েবসাইটে তাকে প্রধান চিকিৎসক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি ২০১৮ সালে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত পত্রিকা বেইজিং ইয়ুথ ডেইলি'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আলোচ্য ভুয়া দাবিটি সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি জানান, চীনা ওয়েবসাইট Weibo-তে একটি নিবন্ধে তার ভুয়া নাম ব্যবহার করে স্বাক্ষর এবং হাসপাতালের স্টাম্পসহ ভুয়া বক্তব্যটি প্রকাশ করা হয়।
'লেবুর রস মিশ্রিত গরম পানি ক্যান্সারের সেল ধংস করে বলে কথিত অনলাইন নিবন্ধটি আমার নাম ব্যবহা করে অন্য কেউ লিখেছে। এবং ওই নিবন্ধে আমার বলে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও আমার নয়। দয়া করে এগুলো বিশ্বাস করবেন না।', বলেছেন চেন।
তিনি আরও বলেন, 'মূলত আমার কাজের ক্ষেত্র হলো হেমাটোলোজি। ক্যান্সার প্রতিরোধক খাবারের ওপর আমি কোনো গবেষণা করিনি এবং WeChat-এ বা ইন্টারনেটে কোথাও আমি ক্যান্সার প্রতিরোধক খাবার নিয়ে কোনো প্রবন্ধও লেখিনি।'
লেবুর রস মিশ্রিত গরম পানি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কাজ করে বলে ছড়ানো ভুয়া খবর এর আগে এএফপি খণ্ডন করেছিলো।
এমন কোনো কন্টেন্ট আছে যা আপনি এএফপি’কে দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করাতে চান?
আমাদের সাথে যোগাযোগ