ভারতের দিল্লিতে নির্মিতব্য বিমানবন্দর এশিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর নয়
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বেশকিছু পোস্টে ভারতের দিল্লির উপকন্ঠে নির্মিতব্য নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মহাপরিকল্পনার কিছু ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি হবে এশিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর। দাবিটি বিভ্রান্তিকর; প্রকৃতপক্ষে বিমানবন্দরটি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চেয়ে আয়তনে ছোট হবে এবং চীনের কিছু বিমানবন্দরের চেয়েও কম বিমান এখানে চলাচল করবে।
গত ২৫ নভেম্বর ২০২১ সালে এখানে পোস্টটি শেয়ার করা হয়।

সেদিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির ৪৮ মাইল দূরে উত্তর প্রদেশের জেওয়ারে নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, "এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তজার্তিক বিমানবন্দর উওরপ্রদেশের নয়ডাতে তৈরি হবে যা আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জী উদ্বোধন করেছেন। ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ফলে ১ লক্ষ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হতে চলেছে...."।
ভারতেও টুইটার ও ফেসবুকে একইরকম দাবি সহকারে পোস্ট করা হয়েছে।
ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যমও অনুরূপ প্রতিবেদন করেছে।
তবে দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
বিমানবন্দরের আয়তন
গিনেস বিশ্ব রেকর্ড অনুযায়ী সৌদি আরবের দাম্মামে অবস্থিত বাদশাহ ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর।
এর আয়তন প্রায় ৭৮ হাজার হেক্টর অথবা ৭৮০ বর্গকিলোমিটার। যদিও মূল টার্মিনাল ভবনের আয়তন ৪৩ বর্গকিলোমিটার, যা মূল আয়তনের প্রায় পাঁচ ভাগ।
সৌদ আরব এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত।
অন্যদিকে ভারত সরকার অনুমোদিত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, নয়ডা বিমানবন্দর চার ধাপে মোট ১৩৩৪ হেক্টর তথা ১৩.৩৪ বর্গকিলোমিটার ভূমির উপর নির্মিত হবে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিমানবন্দরটি মোট ১৩৩৪ হেক্টর আয়তনের হবে।
সুইস রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ফ্লুগাফেন জুরিখ এজি বিমাবন্দরটি নির্মাণ করবে এবং বিমাবন্দরটি পরিচালনা করার জন্য তারা ৪০ বছরের চুক্তি করেছে।
নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা নিকোলাস শেঙ্ক গত ১৭ ডিসেম্বর এএফপিকে বলেন, "৪০ বছরের মেয়াদে চার ধাপে ১৩৩৪ হেক্টর জায়গার উপর আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবো।"
যাত্রী ধারণ ক্ষমতা
২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিমানবন্দরটির প্রথম পর্যায়ের কাজ সমাপ্ত হবে এবং এসময় থেকে প্রতিবছর ১২ মিলিয়ন যাত্রী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করবেন।
সরকারি মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৬০ সালে চতুর্থ ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রতিবছর ৭০ মিলিয়ন যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করবেন।
তবে এশিয়ায় আরো বিমানবন্দর রয়েছে যেখানে প্রতিবছর ৭০ মিলিয়নের বেশি যাত্রী পারাপার হন।
দুবাই সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ৮৮ মিলিয়ন যাত্রী দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেন।
বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দরসমূহের বৈশ্বিক ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ এয়ারপোর্টস কাউন্সিল ইন্ট্যারন্যাশনাল (এসিআই) এর তথ্য অনুযায়ী কেবল ২০১৯ সালেই প্রায় ১০০ মিলিয়ন যাত্রী বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন।
বিমান চলাচল
ভারত সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৯৬,৪০০ টি বিমান বন্দরটিতে উঠানামা করবে। আর চতুর্থ ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পরে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৪,৮৯,৭০০-তে।
অন্যদিকে এয়ারপোর্টস কাউন্সিল ইন্ট্যারন্যাশনাল এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বেইজিং বিমানবন্দরে ৫৯৪,৩২৯, সাংহাই বিমানবন্দরে ৫১১,৮৪৬ এবং গুয়াংজু বিমানবন্দরে ৪৯১,২৪৯ টি বিমান উঠানামা করেছে।
নয়ডা বিমানবন্দরের কর্তৃত্বের অংশীদার যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এর চেয়ারম্যান অরুন ভীর সিং এএফপিকে জানান যে ২০৬০ সালের পর বিমানবন্দরটি আরো ৫,৮০০ হেক্টর জমি নিয়ে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থাকলেও এখনো ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান।