আফগান নারী পাইলটকে 'পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে' মর্মে ভুল তথ্য ও ছবি ফেসবুকে
বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে দুটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ছবিগুলো একজন আফগান নারী পাইলটের এবং তাকে তালেবান পাথর ছুঁড়ে হত্যা করেছে। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান কর্তৃক আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর ফেসবুকে এসব পোস্ট ছড়িয়েছে। দাবিটি অসত্য। ২০১৬ সালে তোলা প্রথম ছবিতে একজন আফগান নারী পাইলটকে স্থানীয় একটি সামরিক ঘাঁটিতে দেখা যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যেটি মূলত অন্য একজন নারী হত্যার ঘটনার।
ছবিগুলো ফেসবুকে ১৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে এখানে পোস্ট করা হয়েছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: "সোফিয়া ফিরোজি" আফগানিস্তান বায়ুসেনার প্রথম মহিলা বিমান চালিকাকে শরিয়া কানুন অনুসারে পাথর ছুঁড়ে নিষ্ঠুর হত্যা করলো তালিবানিরা! ধিক্কার তালিবান।''
পোস্টের দুটি ছবির মধ্যে একটিতে ইউনিফর্ম ও স্কার্ফ পরা একজন নারী সামরিক পাইলটকে এবং অন্যটিতে রক্তাক্ত আহত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে।
কন্টেন্ট সতর্কতা
তালেবান কর্তৃক পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবির সাথে ছবি দুটি ফেসবুকে এখানে, এখানে ও এখানে পোস্ট করা হয়েছে।
কিন্তু দাবিটি ভুল।
গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে প্রথম ছবিটি (নারী পাইলট) বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস এর আর্কাইভে পাওয়া গেছে।
এপি'র ওয়েবসাইটের ক্যাপশন অনুযায়ী, আফগান পাইলট সাফিয়া ফিরোজি ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর কাবুলের নিকটবর্তী একটি আফগান সামরিক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেয়ার সময় তোলা ছবি।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এপি ফিরোজিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে ওই সময় ২৬ বছর বয়সী ফিরোজি কিভাবে শরণার্থী শিবির থেকে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় নারী সামরিক পাইলট হয়েছেন সেই গল্প বলেছেন।
২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর এই রিপোর্ট প্রকাশ করা সময় পর্যন্ত ফিরোজি মারা গেছেন এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য খবর খুঁজে পায়নি এএফপি।
নৃশংস ছবি
ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টগুলোতে থাকা দ্বিতীয় ছবিটি দেখতে বেশ নৃশংস এবং এটি মূলত ব্লাসফেমির অভিযোগে কাবুলে গণপিটুনিতে নিহত এক নারীর খবরের সাথে ২০১৫ সাল থেকে অনলাইন বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৫ সালের ৭ মে তারিখে ব্রিটেনের 'দ্য টাইমস' পত্রিকায় এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এই ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিলো। ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো: "Men to hang for mob murder of woman".
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফারখুন্দা নামের এক নারীকে হত্যার অভিযোগে চারজন পুরুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো। আরও জানানো হয়, কোরআন পোড়ানোর ভুল অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ কাবুলে ওই নারীকে পিটিয়ে এবং গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়।
কন্টেন্ট সতর্কতা
২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছিল।
এই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিহত নারীর পুর্ণ নাম 'ফারখুন্দা মালিকজাদা'। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ছবির দৃশ্যটি নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে থাকা ভিডিও ৪ মিনিটের সময় দেখা যায়।
কন্টেন্ট সতর্কতা
ওই সময় এএফপি রিপোর্ট করেছিল যে, একটি মসজিদের পাশে ছাদ থেকে ফেলে একটি গাড়ির নিচে পিষে হত্যার আগে ওই নারীকে লাঠি দিয়ে পেটানো এবং তার উপর পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তাজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছিল এবং আফগান নারীদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছিল।